পরীক্ষামূলক ভাবে জিরা চাষ করে সফল হওয়া জিরা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা।
কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে সর্বপ্রথম এ এলাকায় স্বল্প পরিসরে জিরার চাষ করেছে কৃষকরা। ইতোমধ্যে জিরার গাছগুলো বড় হয়ে ফুল ও ফল আসতে শুরু করেছে। কেউবা আবার ফসল কাটছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
জিরার এমন ফলন দেখে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। সফলতার মুখ দেখবে এমনটি আশা করছেন তারা। গত মঙ্গলবার শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার দেউলী ও মোকামতলাসহ কয়েকটি এলাকায় জিরা চাষাবাদ নিয়ে কৃষকের নানান কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে জিরার চাষাবাদ হচ্ছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। এখন শুধু গবেষণাগারেই নয়, কৃষক পর্যায়েও জেগেছে জিরা চাষে সম্ভাবনা। ফলে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
আয় বাড়বে কৃষকের। কমবে আমদানি নির্ভরতা।সম্প্রতি মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ দেশে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের উপযোগী জিরার জাত আবিষ্কার হয়েছে। বারি জিরা-১ নামে জিরার জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০২২ সালে অনুমোদিত হয়। এরপর স্বল্প পরিসরে পরীক্ষা মূলক ভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদ শুরু হয় এ জাতের জিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অর্থায়নে প্রদর্শনী আকারে কৃষক পর্যায়ে সফল চাষাবাদ সম্পূর্ণ হয়েছে এ জাতের জিরা। চাষকৃত বারি জিরা-১ বাজারের জিরা অপেক্ষা অধিক সুগন্ধি। উপজেলার দুটি স্থানে জিরা চাষ হচ্ছে একটি মোকামতলা ইউনিয়নের মুরাদপুর ও দেউলী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে।
উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে কৃষক সাইফুল ইসলামকে তার চাষকৃত ১০ শতাংশ জমি থেকে জিরার ফসল কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ভরপুর জিরা। কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সফল ভাবে জিরা চাষ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। জিরা গাছগুলো উঠিয়ে রোদে শুকানো পর জিরা মাড়াই ঝাড়াই করবো। আশা করছি প্রতি শতকে ১.৫ থেকে ২ কেজি জিরা পাবো। এখান থেকে যে জিরা পাওয়া যাবে তা বীজ হিসেবে ব্যবহার করবো আমরা। উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের রহবল ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষিব জানান, শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সফল ভাবে জিরা চাষাবাদ করতে পেরেছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, বারি জিরা-১ শীতকালীন জিরা হওয়ার কারণে উপযুক্ত সময়ে বীজ বপন খুবই জরুরি। এ জিরার জীবনকাল ১১০-১২০ দিন। এ জাতের জিরার বীজ বপনের উপযুক্ত সময় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ। শীতকালে আমাদের দেশে যখন বাতাসে আর্দ্রতার শতকরা হার বেড়ে যায় তখন গাছে অল্টারনারিয়া ব্লাইট এবং গোড়া পচা রোগের আক্রমণ বেশী হয়ে থাকে। এ কারণে সফল ভাবে চাষাবাদ করতে প্রতিরোধক হিসেবে নিয়মিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জাতের জিরায় সেচ খুব কম দরকার হয়।প্রতিটি গাছে ফুল ফল চলে আসছে।
কোনো ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা না আসলে আগামী এক মাসের মধ্যে জিরা সংগ্রহ করা যাবে।উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হান্নান জানান, উপজেলায় দুটি স্থানে মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী আকারে জিরার চাষাবাদ হচ্ছে।
গত বছর থেকে জিরার চাষাবাদ স্বল্প পরিসরে হলেও বাস্তবায়িত প্রদর্শনী থেকে উৎপাদিত জিরা বীজ হিসেবে ব্যবহার করে আগামী মৌসুমে এর আবাদ এলাকা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।জিরা চাষের জন্য আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর