ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়তে গিয়ে ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের যুবক হুমায়ুন কবির।
এই ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হুমায়ুন কবির এবং তার দুলাভাই রহমত আলী পরিবার। নাটোরের সিংড়া উপজেলার যুবক হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাশিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
চাকরির আশায় পাড়ি জমিয়েছিলেন রাশিয়ায়। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে অংশ নিতে হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন হুমায়ুন কবির। আর দুলাভাই রহমত আলী বন্দি হয়ে আছেন রাশিয়ান সেনা ক্যাম্পে । ছেলের মৃত্যু আর জামাইকে ফিরে পেতে কেঁদেই চলেছেন কারিমন বেগম।
২৬ জানুয়ারি রাতে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি বিলাপ করে চলেছেন। তার দাবি, অন্তত ছেলের মরদেহ যেন তিনি শেষবারের মতো দেখতে পারেন। জানা যায়, হুমায়ুন কবির (২৮) ও জামাতা রহমত আলী (৪০) দালালদের প্রতারণার শিকার হন। প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে তাদের পরিবার ১৮ লাখ টাকা খরচ করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাশিয়ায় পাঠায়।
প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব, তারপর টুরিস্ট ভিসায় রাশিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের বাধ্য করা হয় যুদ্ধে অংশ নিতে। তিন মাসের মাথায় আসে নির্মম সংবাদ। গত ২৬ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুন কবিরের।
স্বামীকে হারিয়ে এক বছরের মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন হুমায়ুনের স্ত্রী তারা খাতুন। কোলের শিশুটি খুঁজে ফিরছে তার বাবাকে। শিশুটি ও জানে না তার বাবা কোনোদিন আর ফিরবে না।
হুমায়ুনের স্ত্রী তারা খাতুন এক বছর বয়সী কন্যা সন্তান প্রীতিকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে। তিনি বলেন, আমি এখন কি করব এই সন্তানের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে হুমায়ুন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে সে তো আর ফিরলো না। এখন যে টাকার ঋণ করে জমি জমা বিক্রি করে বিদেশে গিয়েছে, সেই টাকা শোধ করব কি করে। দালালরা আমাদের কাছ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা নিয়েছে। কথা ছিল তারা রাশিয়ায় চাকরি করে এই টাকা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করতে পারবে। তারা খাতুন এই সকল দালালদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি করেন।
হুমায়ুনের বড় বোন মেঘনা বেগম জানান, চলতি মাসের ২০ তারিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোর মাধ্যমে হুমায়ুন ও রহমত জানান, তাদের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। এরপর ২৬ জানুয়ারি রহমত জানায় হুমায়ুনের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে মরদেহ ফেরত আনার দাবি জানান।
হুমায়ুনের বন্ধু মাহমুদ জানান, দালালের খপ্পরে পড়ে তার পরিবারের সর্বস্বান্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে, এমনটাই প্রত্যাশা তার।
তিনি আরো জানান, স্থানীয় সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমেই তারা এইভাবে বিদেশে পাড়ি জামান চাকরির জন্য। সাখাওয়াত বর্তমানে সাইপ্রাসে আছে। ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা অফিস বন্ধ করে পালিয়েছে। স্থানীয় দালালদের ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাজহারুল ইসলাম জানান, আমরা এ বিষয়ে অবগত নই, তবে দ্রুত খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবার ও স্থানীয়রা দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, হুমায়ুন কবিরের মরদেহ ফেরত আনা এবং রহমত আলীকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। আর যেন কোন পরিবার এভাবে নিঃস্ব সর্বস্বান্ত না হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর