বয়স প্রায় ১শ বছরের ঘরে ছুঁই ছুঁই অবস্থা কিন্তু তিনি বলছেন সন্তানরা দেখলে কি আর এই বয়সে আমাকে ঘাড়ে করে বাদাম বিক্রির মত কাজ করতে হতো? সন্তানরা দেখেন না, খোঁজখবর নেয় না, তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তি না করে মানুষের কাছে হাত না পেতে এই বাদাম বিক্রির কর্ম করি। কারণ ভিক্ষা করা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণার কাজ, তাই বাদাম বিক্রির হালাল ব্যবসা করি।
বাদাম বিক্রি করে যা আয় হয় সেই টাকা দিয়েই অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দুইজনের সংসার কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছি । বাদাম বিক্রি ছাড়া ভারী কোন কাজ কিছুই করতে পারিনা বয়সের ভারে।
আপনার ছেলে সন্তানরা আপনাকে দেখাশোনা করে কিনা, এমন বিষয়ে জানতে চাইলেই কোন ধরনের সংকোচবোধ ও জড়তা না করেই উপরের কথা গুলো বলে যাচ্ছিলেন এই বৃদ্ধ বাদাম বিক্রেতা আব্দুল মজিদ মুন্সি (৯৫)।
বাদাম বিক্রেতা আব্দুল মজিদ মুন্সির বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মধ্যভান্ডারা রংপুরিয়া মার্কেট এলাকায় । তার সংসার জীবনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
বয়সের ভারে তেমন একটা চোখে দেখেন না, চশমার সাহায্য নিয়েই চলতে হয়। তবুও জীবিকার সন্ধানে এই মাঘের হাঁড় কাঁপানো কনকনে শীতে সকাল হলেই বেরিয়ে পড়েন বাদাম বিক্রির উদ্দেশ্যে।
তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় একযোগ ধরে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাদাম বিক্রি করেই সংসার চালানোর পাশাপাশি অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে হয় আমাকে। আমি নিজেও অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করি। দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভ্যান চালান আরেক ছেলে কুলির কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন।
আমি তিন মাস পর পর বয়স্ক ভাতার টাকা পায়। তবে সেই টাকা দিয়ে কি আর সংসার চলে।শুধু তো সংসার না নিজের ও অসুস্থ স্ত্রীর জন্য আমার প্রতিদিন ওষুধ লাগে। তাই সব মিলিয়ে আমাকে এই শেষ বয়সেও জীবিকার তাগিদে বাদামের ভার ঘাড়ে তুলে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হতে হয় বাদাম বিক্রির জন্য। সারাদিনে বাদাম বিক্রি করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়।
তবে বাদাম বিক্রির আগে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। বয়স বাড়ার সাথে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পুঁজি না থাকায় আমার আর সেই ব্যবসা বেশিদিন করতে পারিনি। তাই শেষ বয়সে এসে অল্প টাকায় বাদামের বোঝা ঘাড়ে তুলে নিতে হয়েছে আমাকে।
স্থানীয়রা অনেকে বলছেন, এমন বয়সে যেভাবে বাদামের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে মজিদ মুন্সি বিক্রি করেন বিষয়টা আসলেই খুবি দুঃখজনক । পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায়। লোকটিকে দেখলেও অনেক মায়া হয়। বাদাম খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও তার কাছে বাদাম কেনে অনেকে । বৃদ্ধ এই বয়সে এসে ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজে ব্যবসা করছেন এজন্য তিনি সমাজের মানুষের কাছে অন্যান্য দৃষ্টান্ত হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবেন। সরকারিভাবে যদি তাকে একটি স্থায়ীভাবে দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে এই বয়সে বাদাম বিক্রির মত পরিশ্রম করতে হতো না।
মজিদ মুন্সির বিষয়ে কথা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের সাথে তিনি জানান, এই বৃদ্ধ বাদাম বিক্রেতা মজিদ মুন্সির সাথে যোগাযোগ করে এবং তিনি আমাদের সমাজসেবার নিয়মের যে ক্যাটাগরিতে পড়বে সেভাবেই তিনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন,ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির পরিবারের সাথে কথা বলে তাকে কিভাবে সহযোগিতা করলে তার জন্য ভালো হয় সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর