ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, 'বিগত ৫৩ বছরে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন চলছে এই পদ্ধতিতে ফ্যাসিস্ট, খুনি ও টাকা পাচারকারী জন্ম হয়েছে। এই জন্য বিশ্বের ৯১ দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন রয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনে প্রতিটা ভোটারের মূল্যায়ন হয় এবং সংসদে প্রতিটি দলের অংশীদারিত্ব থাকবে। তখন এককভাবে কেউ ফ্যাসিস্টের মতো দেশ পরিচালনার পরিবেশ পাবে না।
আমরা বিএনপিকে বলেছি তারা মানতে চায় না, তারা পূর্বের পদ্ধতিতেই নির্বাচন চায়। কেনো চায় সেটা জানি না। আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, দেখেছি সব রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য একমত পোষণ করেছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে এই দেশটা সুন্দর একটা দেশে পরিণত হবে।'
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভোলার চরফ্যাশনে ব্রজগোপাল টাউন হলে ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা দক্ষিণের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি করেছি প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ যে সংস্কার রয়েছে সেগুলো দ্রুত করে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সুন্দর একটি জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী করবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলবো আপনারা খুব সতর্ক অবস্থায় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন। কারণ ইতোমধ্যে ফ্যাসিস্ট ভারতে বিভিন্ন মেটিং করে ফেলেছে। মিটিং করে আমাদের দেশকে অশান্তি করার ব্যাপারে ছক তৈরী করেছে। আপনারা যদি নতজানু নীতি নিয়ে দেশ পরিচালনা করেন তাহলে ফ্যাসিস্ট আবারও সুযোগ পেয়ে যাবে। এই জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য যে সকল দল রয়েছে তাদের প্রতি দেশ ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, স্বাধীনতার গত ৫৩ বছরে যারা এই সুন্দর দেশকে পরিচালনা করেছে তাদের মাধ্যমে আমরা কি পেয়েছি সেটি নতুনভাবে আর স্মরণ করিয়ে দিতে চাই না। তবে এদের পরিচালনায় ৫৩ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে। গত ৫৩ বছরে আমরা দেখেছি রাস্তায় নামলে গুম হয়ে যায় আর ঘরে থাকলে খুন হয়ে যায়। আমাদের কষ্টার্জিত টাকাগুলো যারা ক্ষমতার মসনদে ছিল তারা বিদেশে পাচার করে বেগম পাড়া তৈরী করে।
তিনি আরো বলেন, গত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ইসলামের পক্ষে সব দিক থেকে একটি ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। কারণ স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছর যারা এদেশ পরিচালনা করেছে তাদের শাসন আমরা দেখেছি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসন আমরা দেখেছি। এই দেশে শতকরা ৯২ শতাংশ মুসলমান বসবাস করে। এই দেশের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা হলো ইসলামী নীতি আদর্শ অনুযায়ী দেশ চলবে। কিন্তু দুঃখ হলো ইসলামী নীতি আদর্শ অনুযায়ী দেশ চলে নাই এবং ইসলামের সুফল আমরা কেউ দেখি নাই ও ভোগ করতেও পারি নাই।
ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা দক্ষিণের সভাপতি আলাউদ্দিন তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু ইউছুফের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
সম্মেলন শেষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা দক্ষিণের পুরোনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটিতে মাওলানা নূর উদ্দিনকে সভাপতি, মাওলানা গোলাম মোরশেদকে সহ-সভাপতি ও মাওলানা আব্বাস উদ্দিনকে সেক্রেটারি করা হয়।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর