প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বছর শুরু হয় নতুন বইয়ের ঘ্রাণে। কিন্তু এবার সেটি হয়নি। বছরের প্রায় এক মাস পার হলেও এখনো শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছায়নি। এ নিয়ে হতাশা রয়েছে অভিভাবকদের মাঝে। তাদের অভিযোগ, নতুন বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়তে বসতে চাচ্ছে না।
কক্সবাজার জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর কোন শিক্ষার্থীর হাতে এখন পৌঁছেনি কোন বই। যদিও বছরের শুরুতে প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে বই না পৌঁছার কারণে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির পরে পুরো মার্চ মাস জুড়ে পবিত্র মাহে রমজান, ঈদুল ফিতরের বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস সমাপ্ত নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলছেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই দু-একটি উপজেলায় পৌঁছলেও সব উপজেলায় কখন বই আসবে কেউ বলতে পারছেন না। তবে বই পাওয়া মাত্রই তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিচ্ছেন বলে জানান। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই যথাসময়ে না পৌঁছার কারণেই পাঠদান ব্যাহত হলেও শিক্ষকগণ আন্তরিক হলে শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশাবাদী এ শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে আগামী সপ্তাহে সব উপজেলায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রেরিত বইয়ের চাহিদা পত্র থেকে জানা যায়- কক্সবাজার জেলায় চতুর্থ শ্রেণীর প্রায় ৫৩ হাজার ২৮৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য বই প্রয়োজন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২৮ টি এবং পঞ্চম শ্রেণীর ৫১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বই প্রয়োজন ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৪০ টি। জেলার ৬৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত ৬ টি বিষয়ের বই পড়ানো হয়। চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে এক লক্ষ ৪ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য বই প্রয়োজন ৬ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৭৮ কপি।
এদিকে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নতুন বইয়ের পরিমার্জন ও কিছু সংখ্যক বইয়ে পরিবর্তন আনার কারণে এই বছর বই ছাপাতে বিলম্ব হওয়া বই না পাওয়ার প্রধান কারণ বলে জানা গেছে। কক্সবাজার জেলায় জানুয়ারি মাস নাগাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে ৫১ শতাংশ বই পৌঁছলেও মাধ্যমিকে সব-কটি বই পৌঁছেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, কক্সবাজারে ৬৫৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ লক্ষ ৯০ হাজার ৮২৪ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে বই পৌঁছেছে ৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৬৬৬ কপি। এখনো পর্যন্ত বই পাওয়া যায়নি ৬ লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ কপি। প্রাথমিকে বই প্রাপ্তির হার ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে মাধ্যমিক স্তরের এখনো পর্যন্ত কোনো বই কক্সবাজারে পৌঁছেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়- কক্সবাজারে ৯ উপজেলায় ৬৫৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বইয়ের চাহিদা ছিল ১২ লক্ষ ৯০ হাজার ৮২৪ টি। এর মধ্যে বই পৌঁছেছে ৬ লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ টি। জেলায় বছরের শুরুতে শুধু মাত্র বই এসেছে প্রাক প্রাথমিক, প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণী এবং তৃতীয় শ্রেণীর জন্য । চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত কোনো বই কক্সবাজারে পৌঁছেনি। প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর কোন বই জেলা প্রাথমিক শিক্ষক অফিসে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। কক্সবাজারে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য ৪৭হাজার ৪২০ টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে শতভাগ বই কক্সবাজারে পৌঁছেছে। প্রথম শ্রেণীর ১ লক্ষ ৫২ হাজার তিনশো একটি বই এর চাহিদা বিপরীতে শতভাগ বই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর ১ লক্ষ ৫২ হাজার ১১৫ কপি বই চাহিদার বিপরীতে শতভাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ লক্ষ দশ হাজার ৫২০ বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পৌঁছেছে ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৮২০ টি। বাকি রয়েছে ১৮০০ বই। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭২৮ টি বইয়ের চাহিদা রয়েছে কিন্তু চাহিদার বিপরীতে কোন বই বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য তিন লক্ষ আট হাজার চল্লিশটি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে এখনো পর্যন্ত কোন বই বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
জানুয়ারি মাস নাগাদ উপজেলা ভিত্তিক বই প্রাপ্তির হার হলো কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৫০ দশমিক ৯৬ শতাংশ, রামু উপজেলায় ৫১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ঈদগাঁও উপজেলায় ৫০ দশমিক ১৩ শতাংশ, চকরিয়া উপজেলায় ৫১ দশমিক ৪৮ শতাংশ, পেকুয়া উপজেলায় ৫১ দশমিক ৭১ শতাংশ, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ,মহেশখালী উপজেলায় ৫১ দশমিক ৮০ শতাংশ, উখিয়া উপজেলায় ৫০ দশমিক ৩২ শতাংশ, টেকনাফ উপজেলায় ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর