সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনার পুরোদস্তুর প্রস্তুতি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে। রাত পোহালেই দেবীর আরাধনায় মাতবেন ভক্তরা। আজ রবিবার দেবীর মূর্তি স্থাপন ও পূজার কর্মযজ্ঞ দেখা যায় হলের উপাসনালয় ও মাঠে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে জগন্নাথ হলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা কারিগররা শেষ সময়ে তুলির আঁচড়ে প্রতিমা সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজে ব্যস্ত। রাতের মধ্যে সকল প্রতিমা বুঝে দেওয়া হবে বলে জানান, ৩০ বছর থেকে জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার প্রতিমা নির্মাণের অন্যতম কারিগর শ্রীপতি পাল। তিনি বলেন, আমরা গোপালগঞ্জ থেকে এসেছে সাতজনের মতো একটি দল। আমাদের সকল কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে, রাতের মধ্যে সকল কাজ আমরা গুছিয়ে ফেলে অর্ডার করা প্রতিমা ডেলিভারি দিয়ে পারব।
আরেক প্রতিমা কারিগর উত্তম বালা বলেন, নির্মাণ কাজ আমাদের অনেক আগেই শেষ। এখন শুধু অলঙ্কারে রং, চুল লাগানোসহ প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ বাকি আছে। রাতের মধ্যে আমরা সব কাজ শেষ করে ফেলতে পারব। আশা করি, প্রতিবারের ন্যায় এবারও জগন্নাথ হলে ঐতিহ্যবাহী পূজা ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও সরস্বতী পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, এবছর জগন্নাথ হলের পক্ষ থেকে একটি, বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনগুলোর পক্ষ থেকে ৭২ টি এবং জগন্নাথ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যুবাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মণ্ডপের আয়োজন করা হয়েছে। মোট ৭৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, গত জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হতে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুদিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি, ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে দর্শনার্থী শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও বিশুদ্ধ খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আগত পুণ্যার্থীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে। '
এদিকে পূজাকে ঘিরে আগতদের নির্দেশনাবলি প্রকাশ করেছে হলটির পূজা আয়োজক কমিটি।
শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনাবলি: পূজার ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা সর্বদা বজায় রাখতে হবে; জগন্নাথ হলের আবাসিক/অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে; জগন্নাথ হল প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত মোটরসাইকেল নিয়ে হলে প্রবেশ করা যাবে না; বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উপাসনালয়ের মূল বেদিতে ওঠা যাবে না; উপাসনালয়ে/হল প্রাঙ্গণে সব ধর্ম-বর্ণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে এবং কোনো ধর্মের প্রতি বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না; উপাসনালয়ে/হল প্রাঙ্গণে দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য/মন্তব্য করা যাবে না; হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ভবনে/রুমে কোনো অতিথি নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না; হলের মধ্যে পার্টি স্প্রে, গ্যাস বেলুন, আতশবাজি, ফানুস, ইত্যাদি বহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ; হল প্রাঙ্গণে নির্ধারিত স্থান/লাল রঙের বিন ব্যতীত কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না এবং পূজা প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তি বা কর্মকাণ্ড নজরে এলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
অতিথিদের জন্য নির্দেশনাবলি: শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা সর্বদা বজায় রাখতে হবে; বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া উপাসনালয়ের মূল বেদিতে ওঠা যাবে না; মন্দির/হল প্রাঙ্গণে সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-পেশার দর্শনার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে; উপাসনালয় বা হল প্রাঙ্গণে রাষ্ট্র বা ধর্মবিরোধী কোনো বক্তব্য/মন্তব্য করা যাবে না; হল প্রশাসনের যথাযথ অনুমতি ব্যতীত কোনো অতিথি শিক্ষার্থীদের ভবনে/রুমে প্রবেশ করতে পারবে না; হল প্রাঙ্গণে কোনো প্রকার যানবাহন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।
এছাড়া হাইকোর্ট ও বকশীবাজার দিয়ে আগত অতিথিদের যানবাহন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে (দোয়েল চত্বর সংলগ্ন) পার্কিং করবেন। নীলক্ষেত, শাহবাগ ও পলাশী দিয়ে আগত অতিথিদের যানবাহন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের (নীলক্ষেত সংলগ্ন) মাঠে পার্কিং করবেন; নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও তল্লাশির প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে সহযোগিতা করতে হবে; আগত দর্শনার্থীরা শুধুমাত্র হলের দক্ষিণ দিকের গেট (বুয়েট সংলগ্ন) বা উত্তর দিকের গেট (টিএসসি সংলগ্ন) দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান করবেন; দক্ষিণ দিকের গেট সংলগ্ন অতিথি কক্ষে স্থাপিত ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে মায়েরা প্রয়োজনে দুগ্ধপান করাতে পারবেন; হলের মধ্যে পার্টি স্প্রে, গ্যাস বেলুন, আতশবাজি, ফানুস ইত্যাদি বহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ; হল প্রাঙ্গণে নির্ধারিত স্থান/লাল রঙের বিন ছাড়া কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না; প্রণামি/অনুদান উপাসনালয়ের নির্দিষ্ট প্রণামি বাক্স বা তথ্যকেন্দ্রে প্রদান করতে পারবেন; হলের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার ধূমপান, অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য বা অন্য কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বহন বা সেবন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ; পূজা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে হলের অভ্যন্তরে অবস্থান না করে দ্রুততম সময়ে হল ত্যাগ করতে হবে।
রাত ১০টার মধ্যে আগত অতিথিদের অবশ্যই জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে হবে এবং পূজা প্রাঙ্গণে সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তি বা কর্মকাণ্ড নজরে এলে তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর