মাহমুদুল হাসান পিপাসের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে নেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বন্ধুরা। বিয়ের দু'দিন আগে নিখোঁজ হওয়া পিপাসের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধারের ঘটনায় বন্ধু মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া। সহপাঠীদের দাবি পরিকল্পিত ভাবে তাকে খুন করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
২৮ বছরের টগবগে যুবক মাহমুদুল হাসান পিপাসের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি)। এর দুই দিন আগে হঠাৎ করেই সে নিখোঁজ হয়।
এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। তবে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে নিখোঁজের চারদিন পর তাকে পাওয়া গেলো। তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত ছিল মরদেহ। জনমনে প্রশ্ন হত্যা না আত্মহত্যা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের ধারকী সতিঘাটা নামক এলাকায় একটি কবরস্থানের গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে । রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
মাহমুদুল হাসানের ডাকনাম পিপাস। তার বাড়ি আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর গ্রামে। তিনি জেলা শহরের ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করতেন। একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরিও করতেন পিপাস।
পুলিশ ও পিপাসের স্বজনরা জানান, এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। পরিবারে চলছে বিয়ের আয়োজন। বিয়ের দুই দিন আগে সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হন, রাত ১১টা পর হলেও তিনি বাসায় ফিরেননি। সে সময় তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে পরিবার। কিন্তু কোনো কথা হয়নি। হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হওয়ায় পরিবার থানায় ৩০ জানুয়ারি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে বন্ধুমহল ও স্বজনেরা পোস্ট দেন।
তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাওয়া গেছে দাবি করে চিকিৎসা করাতে হবে বলে একটি চক্র পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। রোববার দুপুরে সতিঘাটা এলাকার একটি কবরস্থানে গাছে ঝুলন্ত মরদেহ পায় স্থানীয়রা । পরে মরদেহটি মাহমুদুল হাসান পিপাসের বলে শনাক্ত করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহত মাহমুদুলের বন্ধু হাসিবুর রহমান বলেন, একটি মেয়ের সঙ্গে সাত বছর প্রেমের সম্পর্ক থাকার পর ৩১ জানুয়ারি বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছিল। সে বিয়েতে আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের বিয়ের দাওয়াত করেছিল। বিয়ের দুই দিন আগে নিখোঁজ হয়। আমরা তার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়ায় মর্মাহত হয়েছি।
আরেক বন্ধু সোহান হোসেন বলেন, গত বুধবার দুপুরে মাহমুদুলের সঙ্গে শহরের বারোঘাটি পুকুরপাড়ে দেখা হয়েছিল। গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি। সে বিয়ের খরচ নিয়ে চিন্তায় ছিল। আমরা কয়েকজন বন্ধু তাকে সাহস জুগিয়েছি। এরপর তার সঙ্গে আর দেখা ও কথা হয়নি। এটি আত্মহত্যা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
নিহতের বড় ভাই মেসবাহুর রহমানের মোবাইলে কল করলে তার বন্ধু রুহুল আমিন কলটি রিসিভ করেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। অভিযোগের কপি র্যাব ক্যাম্পে দেওয়া হলে তারা জিডি করার পরামর্শ দেন। এরপর আমরা থানায় একটি জিডি করেছি। নিখোঁজ থাকা অবস্থায় তার সর্বশেষ লোকেশন ছিল সদরের ধারকি এলাকায়। ওই এলাকায় খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। এরপর তো তার লাশ পাওয়া গেল। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
জয়পুরহাট থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বদিউজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। লাশটি হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত না হলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা হয়েছে। পাশাপাশি তদন্তও চলছে।
মরদেহটি দু/এক দিন আগের কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এস আই বদিউজ্জামান। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন জানান, পিপাসের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে জোর পুলিশি তৎপরতা চলছে বলে জানান।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর