• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৮ সেকেন্ড পূর্বে
এম. সুরুজ্জামান
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:১৪ রাত
bd24live style=

গারো পাহাড়ে চলছে অবৈধ বালু লুটপাটের মহোৎসব

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ি সীমান্তের নদী নালা, খাল বিল ঝর্ণা, ফসলি জমি, জলাশয়, বন বিভাগের পাহাড় ও নদীর পাড় ভেঙে নির্বিচারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। এতে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য বিলীন হয়ে ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। 

জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত গারো পাহাড়ের পাদদেশে অপুর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রাকৃতিক খনিজ ও বনজ সম্পদে ভরপুর শেরপুরের গারো পাহাড়। এই সৌন্দর্যকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র, নালিতাবাড়ির মধুটিলা ইকোপার্ক ও পানিহাতা পর্যটন কেন্দ্র। এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গারো পাহাড়। সৌন্দর্য উপভোগ করতেই দর্শনার্থীদের এই এলাকায় আগমন ঘটে তাদের।

এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাচ্ছে। কিন্তু এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আশপাশের এলাকায় স্থানীয় বালুদস্যুরা নালিতাবাড়ীর ভোগাই, চেল্লাখালি ও ঝিনাইগাতীর মহারশি, সোমেশ্বরী, কর্ণঝোড়া ও কালঘোষা নদীসহ বিভিন্নস্থানে শতশত মিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পরিবেশের ভারসাম্যের ক্ষতি সাধন করে অবাধে বালু লুটপাট করে আসছে। এতে সৌন্দর্য হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। 

এদিকে, নদী থেকে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি গারো পাহাড়ি গোপ্পে মিনি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত করে চলছে সাদা বালু উত্তোলন। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এসব বালু লুটপাটের বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হচ্ছে। নদীর পাড়ের ফসলি জমি, বনবিভাগের পাহাড় কেটে নির্বিচারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু দেশের বিভিন্নস্থানে পরিবহণ ও বিক্রি করা হচ্ছে। বালুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ এখন বালু লুটপাটে সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। 

বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিট্রাক বালু ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গতবছর যে বালু বিক্রি করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। বর্তমানে গত বছরের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দামে বালু বিক্রি হচ্ছে। বালুর দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা গেছে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ওই নদীর বালু বন্ধ থাকায় শেরপুরের গারো পাহাড়ের বালুর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই অর্থের লোভে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনে জড়িয়ে পড়েছে অনেকেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলবেঁধে এসব এলাকায় অবাধে বালু উত্তোলন শুরু করে এক শ্রেণির অসাধু বালু উত্তোলনকারী চক্র। গত কয়েক মাসে বালু লুটপাট করে গারো পাহাড়ের অনেকেই কোটিপতি বনে গেছেন। 

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, নদীগুলোর ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থানে এক দুই মাস বালু উত্তোলনের পর সেখানে আর বালু থাকে না। পরে  বালুখেকোরা সারা বছর ইজারা বহির্ভূত এলাকায় বালু লুটপাট করেন। অভিযোগ রয়েছে, বালুখেকোরা গায়ের জোড়ে দীর্ঘদিন যাবত দিনেরাতে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করে আসছে।

বর্তমানে নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর থেকে শুরু করে ঝিনাইগাতী উপজেলার কর্ণঝোড়া সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ও জেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজার গ্রামেগঞ্জে,পাড়া মহল্লায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে এমনকি বাড়ির সামনে বসানো হয়েছে অবৈধ বালুর হাট। এসব স্থান থেকে প্রকাশ্যে বাধাহীনভাবে বিক্রি করা হচ্ছে বালু। অভিযোগ রয়েছে, বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় বালু লুটপাটের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপর নেমে আসে বালুদস্যুদের কালো থাবা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু লুটপাট প্রতিরোধে অভিযান করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে। সরজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাবে ভূষিত হচ্ছেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। 

আরো জানা গেছে,গত ৫ আগস্টের পর নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রশাসনের কাজের অংশ হিসেবে বালু লুটপাট বন্ধের দিকে অবস্থান নেন। তাকে প্রায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাতে হয় বালু লুটপাট বন্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তাকে কোনোভাবে দমাতে না পেরে বালুখেকোরা নানা অজুহাতে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে নামে। একপর্যায়ে বদলি হতে হয় তাকে। অবৈধ বালুর গাড়ি আটক করে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাব পান ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক।

গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক উপজেলা সদরের বিভিন্নস্থানে অবৈধ বালুর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় অবৈধ বালু ভর্তি একটি গাড়ি আটকসহ ৪ শ্রমিককে ১০ দিনের করে কারাদণ্ড দেন। এই ঘটনায় বালুদস্যুরা উপজেলা পরিষদ ঘোড়াও করে সাজাপ্রাপ্ত শ্রমিকদের ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

ময়মনসিংহ বনবিভাগের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, বন এলাকা থেকে বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তারা হুমকি ধমকির মধ্যে রয়েছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেস্ট রেঞ্জে কর্মরত সহকারি বন সংরক্ষক এসডি মো. তানভীর আহমেদ ইমন বলেন, লোকবলের অভাবে ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বন এলাকা থেকে পাথর ও বালু লুটপাট বন্ধ করতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে লোকবল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরও এমন বালু লুটপাট করা হয় ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে। তবে সে সময় শুধু নদীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে নতুন করে অসংখ্য বালু ব্যবসায়ী ও বালু মহালের আবির্ভাব ঘটেছে। থেমে নেই বেপরোয়াভাবে বালু লুটপাট। এসব বালুদস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে জেলার নদী, নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি ও নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ। একইসাথে হুমকিতে পড়েছে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য। তাই এলাকাবাসীর দাবি পরিবেশের ভারসাম্যের কথা বিবেচনা করে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জীববৈচিত্র্য ও নদী রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com