অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিনে জমে উঠেছে মেলা। পাঠক-দর্শনার্থীতে মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। একদিকে সপ্তাহের সঙ্গে শিশুপ্রহর থাকাতে যেন বাড়তি পাওনা ছিল সপ্তম দিনের মেলা।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার ৭ম দিনে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এছাড়া সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। এ আজ নতুন বই এসেছে ১৮৪টি।
অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার।
এতে ক শাখায় ৩০৩, খ—শাখায় ৩২৫ এবং গ শাখায় ১২২ জন সর্বমোট ৭৫০জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা সকাল ১০টায় বাংলা অ্যাকাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক শাখায় ১৪১ জন, খ শাখায় ২০৭ জন এবং গ শাখায় ৮৫ জন সর্বমোট ৪৩৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. তারিক মনজুর, অধ্যাপক শায়লা আহমেদ এবং বাচিকশিল্পী শফিকুর রহমান বাহার।
এদিন বিকেলে তিনি চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চাইনিজ বুক হাউজের স্টল পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, সরকার কোনো ধরনের মব জাস্টিস এর পক্ষে নয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। স্টল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতার বিষয়ে ফারুকী বলেন, আগামী বছরে অন্তত ১০টি বই অনুবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি চীনা ক্লাসিক বই বাংলায় এবং পাঁচটি বাংলা ক্লাসিক বই চীনা ভাষায় অনুবাদ হবে। প্রাথমিকভাবে ১০টি বই অনুবাদ করা হলেও ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা দিতে চীন সহযোগিতা করতে আগ্রহী। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময় এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো হয়েছে। এরই মধ্যে কুনমিং ও ইয়ানমান প্রদেশের তিনটি হাসপাতাল নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশের সরকার ও ভ্রমণ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের প্যাকেজ চালু করা হবে। আশা করা হচ্ছে, মে-জুনের মধ্যে বাংলাদেশি রোগীরা কুনমিং শহরের তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এজন্য উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।
এছাড়াও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমরা সাহিত্য ছাড়াও সংস্কৃতির আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কীভাবে বিস্তৃত করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি এবং অচিরেই একটা আপডেট আপনারা পাবেন যেটি সিনেমাপ্রেমীদের আনন্দিত করবে।
এদিকে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাসের দর্পণে গোলাম মুর্শিদ পাঠ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্বারোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
প্রাবন্ধিক বলেন, গোলাম মুরশিদের ইতিহাসভিত্তিক আলোচনা বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস—চর্চায় পথিকৃৎ সমতুল্য। বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ইতিহাস প্রাতিষ্ঠানিকতা পেলে গোলাম মুরশিদ হবেন তার পুরোধা ব্যক্তি। তাঁর ইতিহাস চর্চার প্রধানতম বৈশিষ্ট্যগুলো হলো উপেক্ষিতের প্রতি নজর, আন্তঃশৃঙ্খলাধর্মীতা এবং ব্যক্তিকে ইতিহাসের কর্তা সত্তায় অধিষ্ঠিত করা। বাংলাদেশে প্রথাগত ইতিহাস চর্চায় তাঁর নাম যতটা উজ্জ্বল, এর চেয়ে সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি দারুণ শক্তিমান। বাংলা সাহিত্যের প্রত্যক্ষ ইতিহাস না লিখলেও তাঁর ইতিহাস চর্চা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
আলোচকদ্বয় বলেন, গোলাম মুরশিদের গবেষণা ও লেখালেখির জগৎ ছিল বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময়। তিনি ছিলেন গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং প্রজ্ঞাময় একজন গবেষক। অত্যন্ত নির্মোহভাবে তিনি ইতিহাসকে দেখার চেষ্টা করেছেন।
সাহিত্য বিশ্লেষণ করে ইতিহাস ও জীবনী অনুসন্ধানে আত্মনিয়োগ করেছিলেন গোলাম মুর্শিদ। সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাস ও রাজনৈতিক ইতিহাস চর্চা ছাড়াও অভিধান চর্চার দিক থেকেও গোলাম মুর্শিদ উজ্জ্বলতম নাম হয়ে থাকবেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, বৈচিত্র্যসন্ধানী, গভীরস্পর্শী ও পরিশ্রমী গবেষক গোলাম মুর্শিদ বাংলাদেশের গবেষণা জগতে শ্রেষ্ঠ গবেষকদের একজন। বিদ্যাচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের ও ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য বাতিঘর হয়ে থাকবেন।
জুলাই গণ অভ্যুত্থান ২০২৪ এর শহিদ স্মরণে আজকের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
সঞ্চালানায় ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক জুবায়ের ইবনে কামাল। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকতিজা আহসান ও কবি মৃদুল মাহবুব।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর