![BD24LIVE.COM](https://www.bd24live.com/bangla/public/logo-bd24live.png)
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক সফরে কক্সবাজার এসেছিলেন জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী। সেসময় নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। এরপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে অভিযুক্ত হয়ে ২০১০ সালে গ্রেফতার ও পরবর্তী রায়ে মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহছান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ পুরোনো অনেক নেতার ফাঁসি হলে বন্ধ হয়ে যায় জামায়াতের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম। তবে ম্যান টু ম্যান সাংগঠনিক যোগাযোগ সবসময় সচল রাখে দক্ষ নেতৃত্ব।
গত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম সচল করে জামায়াতে ইসলামী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ সংস্কারের উদ্যোগের ফাঁকে সারাদেশে দলীয় ভিত্তি মজবুত করতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা হতে পাথুরিয়া চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে কমিটি গঠন বা স্বজন সমাবেশ করে নিজেদের প্রতি জনসমর্থন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল জামায়াত-শিবির। তারই সূত্র ধরে প্রায় ১৬ বছর পর কক্সবাজারে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ্যে কর্মী সম্মেলন করছে দলটি।
জেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি আল আমীন মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত ছয় মাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া এ নয় উপজেলায় ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং ইউনিট পর্যায়ে বৈঠক ও নতুন কমিটি গঠন হয়েছে। মূল দল ছাড়াও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের একই কার্যক্রম চলে। সব কিছু গুছিয়ে এবার বড় পরিসরে কর্মী সম্মেলন করছে জামায়াতে ইসলামী। প্রায় ১৬ বছর পর ৮ ফেব্রুয়ারির কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে আসছেন আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান।
কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠাতব্য কর্মী সম্মেলনে আমিরে জামায়াতের পাশাপাশি অতিথি থাকবেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।
জেলা শাখার আমির অধ্যক্ষ নূর আহমদ আনোয়ারি বলেন, আমিরে জামায়াতের আগমন উপলক্ষ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মী সম্মেলনে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে।
তিনি আরও বলেন, আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলের নিজস্ব ৬ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক থাকছে। থাকবে মেডিকেল টিম, অ্যাম্বুলেন্স, টেকনিক্যাল টিমসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। কর্মী সম্মেলনে পুরুষের পাশাপাশি অংশ নেওয়া নারী কর্মীদের জন্য সরকারি কলেজের নিকটবর্তী ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ আনোয়ারী বলেন, বিগত আওয়ামী পিরিয়ডে বেশি নির্যাতন নিষ্পেষণ ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছে জামায়াত ও ছাত্রশিবির। দেশে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার ছিল নির্বাসিত। আওয়ামী লীগ জুলুমতন্ত্র কায়েম করে দেশের মানুষকে এক প্রকার জিম্মি করে রাখে। আমি ও ডামি মার্কা নির্বাচন করে গুম, খুন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও টাকা পাচার করে দেশকে একটি বিভীষিকাময় ও বিশৃঙ্খল পরিবেশে ঠেলে দেয়। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আশাহত হন জনতা।
জেলা আমির বলেন, আমিরে জামায়াত দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের পাশাপাশি কক্সবাজারের লবণ, পর্যটন, চিংড়ি ও স্থানীয় কৃষিজ পণ্য উৎপাদন-উন্নয়ন ও রপ্তানির প্রয়োজনীয়তা জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরবেন। কক্সবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হয়, স্থানীয়দের জীবন-মান উন্নয়নে সেই পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। পর্যটন রাজধানী বলা হলেও এখনো পর্যটন শিল্পকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব। কিন্তু অসাধু কিছু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে লবণ শিল্পকে নস্যাৎ করে দিতে সরকারকে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির প্রক্রিয়ায় জড়ান। এ ব্যাপারে আমিরে জামায়াতের সহযোগিতা কামনা করবো।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর