• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১১ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৩:২৮ দুপুর
bd24live style=

লাঠি হাতে মহাসড়কে পশুবাহী গাড়ি থামিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

শুক্রবার বিকেল ৩টা। কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের মোড়। এই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ৮-১০ জন যুবক। প্রত্যেকের হাতে লাঠি। নজর মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির দিকে। দূর থেকেই তারা বোঝার চেষ্টা করছেন কোনটি গরুবোঝাই ট্রাক আর কোনটি সাধারণ মালবাহী।

গরুবোঝাই ট্রাক কিছুটা কাছাকাছি এলেই সড়কের মাঝে ছুটে যান তারা। সিগন্যাল দিয়ে সড়কের একপাশে দাঁড় করিয়ে জোর করে আদায় করা হয় চাঁদা। সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা না দিলে ট্রাক আটকে রাখার দেয়া হয় হুমকি-ধামকি।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কথা হয় ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে। নাদেরুজ্জামান স্কুলের মোড় থেকে ৫০০ গজ সামনে নতুন বাজার এলাকার একটি হোটেলে খেতে নেমেছেন তারা। সেখানে খেতে বসে কীভাবে পথে পথে চাঁদাবাজির শিকার হলেন তার বর্ণনা করছিলেন ট্রাকচালক আমজাদ হোসেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ।

তিনি নিজের ট্রাকে এর আগে কখনো এই সড়কে গরু বহন করেননি। এ কারণে এভাবে চাঁদা দেয়ার ঘটনাটিও তার জন্য নতুন। আমজাদ হোসেন বললেন, যারা চাঁদা তুলছে, তাদের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়া কিংবা লুকোচুরি নেই। প্রকাশ্যেই তারা চাঁদার টাকা নিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু উপজেলা রশিদনগর এলাকায় গরুবোঝাই যানবাহন থামিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওই চক্রটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম ও গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুর রহিমের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়াভাবে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

চক্রটি রশিদনগর ইউনিয়নের নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে প্রতি গরু থেকে ৩০০ টাকা হারে আদায় করছে। এতে খামারি, গরু ব্যবসায়ী ও গৃহপালিত গবাদি পশু বাজারে বিক্রি করতে যাওয়া এলাকার সাধারণ মানুষকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে চাঁদা আদায়কারীরা দাবি করছেন, রামুর ইউএনও’র নির্দেশ মোতাবেক টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, প্রতিদিন এই সড়ক হয়ে হাজারের অধিক গরু বিভিন্ন হাটবাজারে যায়। সেই হিসেবে এখানে একদিনে তিন লাখ টাকা এবং মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মহাসড়কের রশিদনগর ইউনিয়নের কাহাতিয়া পাড়া ও ধলিরছড়া এলাকার দুর্ধর্ষ একদল ডাকাত ও দাগি সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে গরুবোঝাই গাড়ি আটকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। রামুর ইউএনও তাদের সড়কে দাঁড় করিয়েছে বলেও তারা প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রশিদনগর নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গরুবোঝাই গাড়ি আটকে প্রকাশ্যে চাঁদা তুলছে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ। পাশাপাশি সড়কের দুই পাশে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র হাতে বিক্ষিপ্তভাবে তাদের গ্রুপের আরও ৫০-৬০ জনকে বসা এবং দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখা গেছে।

ওই সময় চাঁদা আদায়কারী দলের সদস্য বেলাল ও জব্বার জানান, রশিদ বিহীন অবৈধ গরু চেক করতে ইউএনও এবং গর্জনিয়ার ইজারাদার আবদুর রহিম তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। রশিদ বিহীন অবৈধ গরু শনাক্ত হলে ইজারাদারের কাছ থেকে ৩শ থেকে ৬শ টাকায় রশিদ বা টোকেন নিলে তারা গরু ছেড়ে দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য জানান, যারা সড়কে গাড়ি আটকে টাকা আদায় করছে তারা সকলে চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসী। যারা একসময় সাবেক চেয়ারম্যান শাহআলমের অনুসারী হয়ে কাজ করতো। ইউএনও এমন লোকজনকে কেন দায়িত্বে নিয়েছেন বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম সাংবাদিকদের জানান, সরকারিভাবে গর্জনিয়া বাজারের নির্ধারিত সীমানা এক মাইল। এই দূরত্বের মধ্যে ইজারা আদায় করার নিয়ম থাকলেও রামুর ইউএনও অনৈতিকভাবে পুরো উপজেলায় ইজারাদার রহিমকে হাসিল আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছেন।

তার মতে, গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুর রহিমের সাথে যোগসাজশ করে মূলত ইউএনও চোরাচালান বন্ধের নাটক মঞ্চায়ন করছেন। রশিদ বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ গরুকে বৈধতা দিচ্ছেন, একই সাথে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন।

রশিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ডাকাত সর্দার সাদ্দাম, আওয়ামী দোসর সালাহ উদ্দিন, রমিজ, তৈয়ব ও মোস্তাকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গরু ভর্তি গাড়ি থেকে প্রকাশ্য চাঁদা আদায় করছে। সড়কের এই চাঁদা আদায় বন্ধে ইউনিয়ন বিএনপি উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি পুলিশ বক্স স্থাপনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছে বলেও জানান তিনি।

রশিদনগর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাসুম সাংবাদিকদের জানান, সড়কে গরুবোঝাই গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। কয়েকদিন ধরে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি অগ্রসর হতে পারেননি।

এদিকে রামু ফকিরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে রামু ফকিরা বাজারই ছিল উপজেলার একমাত্র স্থায়ী এবং নিয়মিত গরুর বাজার। এই বাজারকে প্রান হীন করার নানা অপতৎপরতা চালানো হয়। যার অংশ হিসেবে ইজারাদার আবদুর রহিমের সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে ইউএনও রামু ফকিরা বাজারের গরু বাজারকে অস্থায়ীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করেন। রামু ফকিরা বাজারের ব্যবসায়ীরা স্থায়ী গরুর বাজার হিসেবে রামু গরু বাজারকে অন্তর্ভূক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষন করেন।

অন্যদিকে রামুর চাকমারকুল বাজার সৃষ্টিলগ্ন থেকে স্থায়ী বা নিয়মিত পশুর হাট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কোরবানি মৌসুমে ২ দিন মাত্র বাজার বসানো হত। কিন্তু চলতি বছর ইউএনও কলঘর বাজারের পশুর হাটকে স্থায়ী করেন। যার ফলে এ বছর ১ কোটির অধিক রাজস্ব বেহাত হয়েছে সরকারের। 

এ ব্যাপারে রামুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মঈনুর রশিদ ও জায়েদ বীন আমান জানান, তাদের নাম ব্যবহার করে একটি মহল সূক্ষ্মভাবে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। মূলত তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা না জেনে অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উপর আঙুল তুলছে।

এই দুই সমন্বয়ক জানান, তারা অবৈধ চোরাচালান বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি দিয়েছেন। তবে সড়কে গাড়ি আটকে অবৈধ গরু আটক করা বা টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া এসব তাদের কাজ নয়। যারা করছে তারা ডাকাত, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ। এখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কোনো সম্পৃক্ততা নাই বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন তারা।

গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুর রহিম তার নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, সড়কে ডাকাতরাই গরুর গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে।

এ ব্যাপারে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রামুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের চোরাচালান বন্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রশিদনগর পয়েন্টে অবৈধ গরু আটকের নোটিশ জারি করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে গরু চোরাচালান বন্ধে ওই এলাকায় পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে। একই সাথে অবৈধ গরু আটকে জনসাধারণকে সজাগ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে মহাসড়কে ইউএনও ও অন্য এলাকার ইজারাদারের নামে টাকা তোলা এবং তা বন্ধে যুক্তিযুক্ত কোন উত্তর তিনি দেননি। তিনি শুধু নীতিবাক্য ও কথার মারপ্যাঁচে মূল বিষয় এড়িয়ে যান।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com