
কিশোরগঞ্জ জেলার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনজেকশন দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিনয় বেহারি সেন (৬৮) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে স্বজনরা। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে জেলার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিনয় বেহারি সেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সতাল এলাকায় মৃত নয়ন সেনের ছেলে ও সতাল অগ্রগামী সংঘের সাবেক সভাপতি ছিলেন।
নিহতের স্বজনরা জানায়, গত কয়েকদিন আগে বিনয় সেনের হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। পরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে ঢাকা থেকে সুস্থ হয় বাড়িতে ফিরে আসে। গতকাল রবিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) আবারও বিনয় সেনের বুকে ব্যথা শুরু হলে জেলা শহরের মেডিল্যাব হেলথ সেন্টার নামের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে রবিবার রাতেই ভর্তি করা হয়।
ভর্তির পর রোগীর অবস্থা ভালো হতে থাকে৷ সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রোগীর অবস্থা আগের থেকে ভালো হয় এবং বুকের ব্যথা-শ্বাসকষ্ট কমে যায়। সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারের লেখা এক সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা সিদ্দিকা ইনজেকশন পুশ করার ৫ মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যায়৷ মারা যাওয়ার সাথে সাথে রোগীর কাগজপত্রসহ ডাক্তার-নার্স সবাই পালিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিনয় সেনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ভিড় করেন স্বজনরা। এদিকে খবর পেয়ে সেখানে যান গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক নাঈম। তিনি জানান, ওই হাসপাতালে গিয়ে প্রায়ই মানুষ ভোগান্তির শিকার হন। চিকিৎসকের কাছে ভালো হওয়ার জন্য রোগী নিয়ে গিয়ে লাশ নিয়ে ফিরতে হয়, এটি দুর্ভাগ্যজনক।
নিহতের ভাতিজা অশিষ সরকার বলেন, ডাক্তারের লেখা ইনজেকশন পুশ করার ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার চাচার মৃত্যু হয়েছে৷ মারা যাওয়ার সাথে সাথে ডাক্তার-নার্স পালিয়ে যায়। এই হাসপাতালে এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, পরে টাকা দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। আমরা টাকা বা ক্ষতিপূরণ চাই না, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের ছেলে পয়ন সেন বলেন, আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে কয়েক ঘণ্টায়ও তারা সদুত্তর দেননি। কোন চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন তার নামও জানানো হয়নি। আমরা বলেছি, ডাক্তারের নামটা বলেন, আমরা জানতে চাই কেন এমনটা ঘটল? কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে, 'সরি, সরি, ভুল হয়ে গেছে'। পরবর্তীতে আমরা প্রশাসন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসলে তারা আর দুঃখ প্রকাশ করেননি, উলটো টালবাহানা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
নিহতের ছোট ছেলে রিদয় সেন বলেন, ‘আমার বাবাকে ভুল ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলেছে। ইনজেকশন পুশের ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। আমার বাবা মারা যাবার পর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার পালিয়ে গেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।’
ইনজেকশন পুশের ৫ মিনিটের মধ্যে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হেলিশ রঞ্জন সরকার জানান, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না। তবে বিষয়টি অবগত হওয়া মাত্র হাসপাতালে ছুটে আসি। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনা ও অভিযুক্ত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি। তাই কে জড়িত বা কী হয়েছিল এখনই বলা যাচ্ছে না।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। রোগীর স্বজনদের হাসপাতাল ভাঙচুর না চালানোর জন্য বলা হয়েছে। স্বজনদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তবে নিহতের ছেলে তনয় সেন প্রথমে চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে তার বাবার মৃত্যুর অভিযোগ এনে বিচার দাবি করলেও পরে তিনি গভীর রাতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর নিজ হাতে লিখা একাট পত্র দেন। চিঠিতে তার পিতার মৃত্যুর ব্যাপারে তার কোন অভিযোগ নেই দাবি করে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেছেন।
উল্লেখ, গত (১৫ জানুয়ারি) শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলার কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধূলদিয়া গ্রামের ফালু মিয়ার ছেলে মল্লিক মিয়া (৩০) ও নিকলী উপজেলার দামপাড়া এলাকার আব্দুল কাদের ছেলে জহিরুল ইসলাম (২২)। দুই রোগী হার্নিয়া অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাদিরা তাদের ওটিতে না নিয়ে ওয়ার্ডেই অ্যানেসথেসিয়া পুশ করেন। এর আধা ঘণ্টা পরই তারা মারা যান। এ ঘটনার পর হাসপাতালের সামনের রাস্তা বন্ধ করে স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। এতে হাসপাতালসহ আশপাশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর