
উন্নত জীবনের আশায় স্বল্প টাকায় ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে আটক করে মারধরের পর হৃদয়ের পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দালাল চক্র।
ট্রলারে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় বাংলাদেশি অভিবাসী মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত লিপন মাতব্ব্বর (৩৬) ও আনোয়ার ওরফে আনু মাতব্ব্বর (৪০) নামের দুই দালালকে গ্রেফতার করেছে (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) র্যাব-১০।
র্যাব-১০ সিইও এডিশনাল ডিআইজি কামারুজ্জামান বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর ভাটার এলাকা থেকে লিপন মাতব্বর ও ঢাকার দোহার এলাকা থেকে আনু মাতাব্বরকে গ্রেফতার করা হয়। ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মাদারীপুরের রাজৈর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে দায়েরকৃত দুটি মামলায় আসামি হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত লিপন মাতাব্বরের ভাই মাসুম মাতাব্বর ইতালি প্রবাসী। সে নিজ এলাকা থেকে ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে লোক পাঠানোর কথা বলে বিদেশগামী বেশ কয়েকজনকে সংগ্রহ করে। অপরদিকে আনু মাতাব্বর নিজ এলাকা মাদারীপুরের রাজৈর থেকে হৃদয় হাওলাদার নামে এক যুবককে সংগ্রহ করে পাসপোর্ট ও অগ্রিম দেড় লক্ষ টাকা নেয়।
এর কিছুদিন পর তাদেরকে একত্র করে বাসযোগে এয়ারপোর্টে নিয়ে সেখান থেকে তাদেরকে বিমানে করে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। লিবিয়া যাওয়ার পর মোবাইলের মাধ্যমে হৃদয় পরিবারকে জানায় তাকে সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে। ১৫ লক্ষ টাকা না দিলে তার ক্ষতি হবে। উপায়ান্তর না পেয়ে হৃদয়ের পরিবার গত ২৭ নভেম্বর আনোয়ার এর নিকট ১৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে।
টাকা দেয়ার কয়েক দিন পর হৃদয় পরিবারকে জানায় যে, লিবিয়ায় থাকা চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করছে। এ সময় হৃদয়ের বাবা গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের বাড়িতে গিয়ে নির্যাতনের কথা জানালে সে আরো ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে হৃদয়কে ইতালী পাঠানো যাবে না বলে জানায়। ছেলের কথা চিন্তা করে পুনরায় আনোয়ারের নিকট আরো ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে।
পরদিন রাতে হৃদয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিবারকে জানায় যে, লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে লিবিয়ার সাগরপাড়ে নিয়ে গিয়েছে এবং পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। এরপর থেকে পরিবারের সাথে হৃদয়ের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর দুই দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৃদয়ের মরদেহের ছবি পাওয়া যায়।
এ ধরনের ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানে অহরহ করছে। তাই প্রতারক দালালদের খপ্পর থেকে বাঁচতে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর