
নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী, নদীর তীর ও মানিগাও গ্রাম ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মনোহর শিমুল গাছের বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে টকটকে লাল শিমুল ফুল ফুটেছে, যেন গাইছে বসন্তের গান। সেই সাথে কিচির মিচিরে ব্যস্ত অগণিত পাখিরা আর বাসন্তী হাওয়ায় হৃদয় জুড়িয়ে নিচ্ছেন আগত পর্যটকগণ। শিমুলের রক্তরাঙা সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মেতে উঠেছেন ভালোবাসার রঙে আগতরা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গান মতই বলা যায় আহা আজি এই বসন্তে, এতো ফুল ফোঁটে, এতো বাঁশি বাজে, এতো পাখি গায়।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরে ঘেঁষে গড়ে ওঠা এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিমুল গাছের বাগান জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাল গালিচা বিছায়ে ডাকছে সৌন্দর্য পিপাসুদের। আর চোখের তৃষ্ণা মেটাতে প্রতিদিন এই বাগান দেখতে ছুটে আসছেন হাজার পর্যটক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে।
বাগানে বেড়াতে আসা প্রকৃতি প্রেমী শাকিল মিয়া জানান, ফাল্গুন চলে এলেই বাগানের প্রতিটি গাছের ডালে ডালে ফুল ফুটতে শুরু করে আর দেশ-বিদেশ থেকে আসতে শুরু করেন প্রকৃতি প্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকরা। লাল পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় যেন আগত পর্যটকদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে আর সৌন্দর্য শব্দের আসল অর্থ খুঁজে পেয়েছি। তবে এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ সড়ক পথের উন্নয়ন খুবই প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন যাদুকাটা নদী ঘেঁষে মানিগাও গ্রামের পাশেই ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে রক্তিম আভায় বসন্তের মূর্ত প্রতীকে।
সেখানে আগত দর্শনার্থীদের কেউ পরেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি,কেউ সাদা নীল। খোঁপায় গুঁজেছেন টকটকে লাল শিমুল। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে তাদের সঙ্গে এসেছেন প্রিয়জন। কেউ তুলছেন ছবি আবার কেউ হাতে হাত রেখে শিমুলের নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। কেউবা শিমুলের ফুলের পাপড়ি প্রিয়জনের উপরে ছিটিয়ে মেতেছেন ভালোবাসার রঙে।
শিমুলের রক্তরাঙা বসন্তের সৌন্দর্য দেখতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা হাজির হওয়ায় জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে বেড়েছে পেশাদার ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। সেই সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে ঝড়ে পড়া শিমুল ফুল কুড়িয়ে সেই ফুল দিয়ে মালা গেঁথে বিক্রি করা গ্রামীণ নারী,শিশু ও ভালোবাসার প্রতীক তৈরি করার কারিগরদের মধ্যে।
শিমুল বাগানে বেড়াতে আসে জামিল মিয়া জানান, বাগানে ফোটা ফুল দেখলেই বোঝা যায় বসন্ত এসে গেছে। শিমুল বাগানের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তবে বাগানে আরও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ও ভালো মানের খাবার হোটেলের ব্যবস্থা এখন খুবই দরকার। এই গুলো না থাকায় আগতরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
বাগানের স্বত্বাধিকারী বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বাবা নেই তবে বাবার রেখে যাওয়া এই বাগান দেখা শুনা করছি। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পুরো এলাকা জুড়ে টকটকে লাল শিমুল ফুল দেখা যায় শিমুল বাগানে গাছে প্রতিটি ডালে ডালে। রক্তরাঙা শিমুল ফুল আর বাগানের সৌন্দর্য দেশবিদেশে ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিদিন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসছেন। তারা নিরিবিলিতে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং আগত পর্যটকদের জন্য একটি রিসোর্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর