
ইবাদত বন্দেগির আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জেও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে মহিমান্বিত পবিত্র শবে বরাত।
মসজিদে মসজিদে ঢল নেমেছিলো মুসুল্লিদের। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগি আর দোয়ার মধ্য দিয়ে সারারাত কাটিয়েছেন। পবিত্র শবে বরাতের এ রাতে মহান আল্লাহর দরবারে পাপ মোচনের আকুতি জানিয়েছেন মুসল্লিরা।
মাগরিবের নামাজের পর থেকে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদসহ জেলার সকল মসজিদে মুসল্লিরা হাজির হয়েছিলেন। অনেকেই সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে মসজিদে সময় কাটিয়েছেন।
শবে বরাতের রাতে সাধারণত মসজিদে মুসল্লির ঢল নামে। চাপ সামলাতে অনেক মসজিদের ছাদেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। এছাড়াও বড় বড় মসজিদগুলোর সামনে বসেছিলো আতর, টুপি, সুরমা, জায়নামাজ, তসবিহসহ ধর্মীয় বই-পুস্তিকার ভাসমান দোকান।
সারারাত নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মোনাজাত করেছেন রাতের শেষ প্রহরে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কেউ মসজিদে কেউ বাড়িতে থেকে নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কোরআন তিলাওয়াত করছেন। অনেকে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেছেন।
শবে বরাত উপলক্ষ্যে পাড়া-মহল্লার মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনও দেখা গেছে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা ও সড়কে ধর্মীয় পোশাকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দেখা গেছে। পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে গোস্তো, হালুয়া, রুটিসহ নানা উপাদেয় খাবার তৈরির প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়।
সন্ধ্যার পর থেকেই ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদসহ জেলার পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত হতে থাকেন। সারাদেশেই মসজিদগুলোতে ইবাদতের পাশাপাশি এ রাতের ফজিলত ও বিশেষত্ব নিয়ে আলোচনার আয়োজন রয়েছে।
ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। আজ সেই মুক্তির রাত লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত। হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিনগত রাত (শুক্রবার) মুক্তির রজনি হিসেবে পালন করে মুসলিম উম্মাহ। ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরানসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দিসহ নানান ভাষায় এটি ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।
পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনি বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে আয়োজন হিসেবে ছিল, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা। এশার নামাজের পর ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে শবেবরাতের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ আলী। এছাড়া ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদসহ জেলার সকল মসজিদে শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন মসজিদের ইমাম ও খতিবরা।
এরপর শুরু হয় ব্যক্তিগত নফল ইবাদত ও জিকির আজকার। ব্যক্তিগত নফল ইবাদত ও জিকিরের পর ফজরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মসজিদের ইমামরা।
সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ শহরের আখড়া বাজার মদীনী মসজিদ, শিক্ষক পল্লী এলাকার বায়তুল মাকছুদ জামে মসজুদ, বড় বাজার শাহাবুদ্দিন মসজিদ, একরামপুর জামে মসজিদ, শোলাকিয়া জামে মসজিদ, কানিকাটা জামে মসজিদ, বায়তুল নূর জামে মসজিদ, কাচারী বাজার জামে মসজিদ, কোট মসজিদ, সড়ক ভবন জামে মসজিদ, গাইটাল বাসটেন্ড জামে মসজিদসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদ ঘুরে মুসল্লিদের ইবাদতে মশগুল থাকতে দেখা গেছে।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে নানান বয়সী ও গরীব-ধনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মাথায় টুপি আর পাঞ্জাবি পড়ে মসজিদে মসজিদে এসেছেন মুসল্লিরা। কারও হাতে ছিল জায়নামাজ, আবার কারও হাতে তসবি আবার কারোও হাতে কোরআন শরীফ।
মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করতেই তারা মসজিদে এসেছেন।
শবে বরাত উপলক্ষ্যে শরীয়তপুর থেকে পাগলা মসজিদে নামাজ পড়তে আসা অনিক মল্লিক বলেন, ‘আজকের দিনটা খুবই সুন্দর একটা দিন। ইবাদত ও দোয়া কবুলের এ দিনে পাগলা মসজিদে নামাজ আদায় করলাম।’
সজিব নামে আরেক মুসল্লি বলেন, ‘আমি ভোলা থেকে এসেছি। শবে বরাতের নামাজ এই পাগলা মসজিদে পড়ার নিয়তে বের হয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, সেই আশা পূর্ণ হয়েছে।’
আকাশ নামে আরেক মুসুল্লি বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ দিনটা আমার কাছে একটু আলাদা মনে হয়। নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা পবিত্রতা অনুভব হয়। এজন্য সন্ধ্যার পরপরই প্রস্তুতি নিয়ে পাগলা মসজিদে চলে এসেছি। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও দেশের মঙ্গল কামনার জন্য দোয়া চাইতে।’
ঢাকা থেকে পাগলা মসজিদে শবে বরাতের নামাজ পড়তে আসা সানজিদ হাসান বলেন, শবে বরাত আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমাদের সবসময় আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে। আমাদের পাপের জন্য তওবা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে সৎকর্ম করার চেষ্টা করতে হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর