জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হবে নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন এ নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলে রয়েছে নানা আলোচনা। তবে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানিয়েছ নির্বাচন কমিশন। এ দিকে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে চাইলে এতে সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কিন্তু এর বিপরীতে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
গণমাধ্যমকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান,সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে এক মত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তবে এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয় এমন মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান,রিফর্ম ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না। নির্বাচন করার জন্য যে সংস্কার লাগে সেটুকুর জন্য জামায়াতে ইসলাম সে সময়টুকু দিতে প্রস্তুত। এছাড়া জনগণের আকাঙ্খা স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। আমরা জনগণেন এই আকাঙ্খাকে সমর্থন করি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো স্থানীয় নির্বাচনকে আমরা মেনে নেব না। জনগণের প্রথম দাবি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সরকার।
তিনি বলেন,স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একটি নির্বাচন করতে তিন চার মাস সময় লাগে। উপজেলা, পৌসভা বা সিটি করপোরেশনে আরও সময় লাগে। এক্ষেত্রে এই নির্বাচনের জন্য এত দীর্ঘ সময় তো নেই।
নির্বাচন ঘিরে ইসির অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো.সানাউল্লাহ বলেন,আমরা বলেছিলাম- আমাদেরকে আর্লিয়েস্ট ডেট টা ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটি প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে অতীতের অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বলেন,পাঁচ স্তরের স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে এক বছরের মতো সময় লাগে। আমাদের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকাযকর হয় নি, কিছু হয়েছে। এ কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে স্পেসিফিক টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার তো আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমে ফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
জাতীয় নির্বাচন ব্যহত হয় এমন কিছুর বিষয়ে কমিশনও সজাগ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন,স্থানীয় সরকার নির্বাচন কতটুকু হবে, কোন কোন ইন্সটিটিউশনের হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারবো। তখন বলতে পারবো এটা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি করবে না। তার আগে সম্ভব না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির এক কর্মকর্তা জানান, আগামী ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আমরা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করারও কাজ শুরু করেছি যা কিছু দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। আমরা যে কার্যক্রমই গ্রহণ করি না কেন সব কিছু থাকবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এর বাইরে আর কোনো পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি আমাদের নাই।
সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসি যে সকল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে-১.ভোটার তালিকা হালনাগদ,২.সীমানা নির্ধারণ ৩. ভোটার তালিকা আইন পর্যালোচনা, ৪.জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, পর্যালোচনা ৫.বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের শর্ত/পদ্ধতি/সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা, ৬.নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা এবং Guidelines For International Election Observers and Foreign Media পর্যালোচনা ৭.নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা পর্যালোচনা, ৮.সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ তৈরী।
বাঁধন/সিইচা/সাএ