
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মুরুং ঝিরি এলাকার ৬টি রাবার বাগানে কর্মরত ২৬ জন শ্রমিককে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করেছে। গতকাল রবিবার ভোররাতে এই অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। অপহৃত রাবার শ্রমিকদের উদ্ধারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। চাঁদার দাবিতে রাবার শ্রমিকদের অপহরণ করা হয়েছে বলে রাবার মালিকরা জানিয়েছেন।
অপহরণকারী সন্ত্রাসীরা রবিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে আরাফাত রাবার প্লান্টেশন এর মালিক শাহাজাহানের মুঠোফোনে অপহৃত শ্রমিকদের মুক্তিপণ বাবদ ৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছেন মর্মে জানা গেছে। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ অপহৃতদের উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহাদাৎ হোসেন।
অপহৃত রাবার শ্রমিকরা হলো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ক্যংগার বিল এলাকার অধিবাসী মো: ফারুক (২৬), মোঃ আইয়ুব আলী (২৬), মোঃ ছিদ্দিক (৪০), মোঃ আব্দুল খালেক (২০), আবদুল মাজেদ (১৭)। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আলিখ্যং এলাকার অধিবাসী মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান (৪৫), মোবারক (২৫), মোঃ হারুন (৩০), রমিজ উদ্দিন (৩০), ছৈয়দ নুর (২৮), মোঃ কায়সার (৩৮), মোঃ মনির হোসেন (৩৫), মোঃ ইমরান (১৭)। কক্সবাজার জেলার ইদগড় ইউনিয়নের মঞ্জুর (৩০), আফসার আলী (২৫), খায়রুল আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৯), মোঃ আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মুবিন (২৫)। অপহৃত আরও ৬ জন শ্রমিকের নাম পাওয়া যায় নি। এরা সকলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মুরুং ঝিরি এলাকায় অবস্থিত রাবার বাগান মালিক মোঃ ফোরকান আহমেদ (৪৮), নুর মোহাম্মদ (৩২), আহসান উল্লাহ (৩৫), মোঃ হুমায়ুন (৪৫), আজিজুল হক (৩৮) ও আবুল কালাম (২৮) এর রাবার বাগানে রাবার শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিল।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার মংমে মার্মা ও জিয়াবুল হক বলেন, ঘটনাস্থলটি দুই উপজেলার সীমানায়। চাঁদার দাবিতে ও দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁদের অপহরণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের লামা সহ আশেপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
সাঙ্গু মৌজা হেডম্যান চংপাত ম্রো বলেন, মুরুং ঝিরি পাড়া এলাকা থেকে রাবার শ্রমিক অপহরণ হয়েছে বলে শুনেছি। এই এলাকাটি পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আঁতুড়ঘর।
লামা উপজেলা সদর থেকে দুর্গম অবস্থিত এই এলাকাটি পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের অভ্যয়ারোন্য হিসাবে পরিচিত। লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, রাবার শ্রমিক অপহরণের খবর পাওয়ার সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তাদের উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, এলাকাটি লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা। এ ঘটনার পর সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধারে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জানুয়ারি গভীর রাতে দুর্গম বমুখাল এলাকায় সশস্ত্র পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা ৩টি খামার বাড়ি থেকে ৭ জন তামাক শ্রমিক ও ২ ফেব্রুয়ারি গজালিয়া ইউনিয়নের কমলা বাগান এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি উপজেলার সরই ইউনিয়নের কেয়াজুপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর সময় স্থানীয়রা অস্ত্রসহ মংএনু মার্মা (৩৪) নামের এক পাহাড়ী সন্ত্রাসীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর