
আমতলীতে ১৮ বছরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন সেতু ভেঙে অটোগাড়ি খাদে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।ভোগান্তিতে পরেছে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে আমতলী উপজেলার চন্দ্রা আউয়াল নগর এলাকায়। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ও উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ২০০৭-০৮ অর্ধ বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর চন্দ্রা আউয়াল নগর এলাকায় আয়রন সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে।ওই সেতুর নির্মাণ কাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। অভিযোগ রয়েছে সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা নির্মাণ করেছেন।
নিম্নমানের ভীম ও অ্যাঙ্গেল দেয়ায় নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের ভীম নড়বড়ে হয়ে যায়। গত ১৩ বছর ধরে ওই নড়বড়ে সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়া সহ উপজেলার অন্তত ত্রিশ হাজার মানুষ চলাচল করে আসছেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুইজন যাত্রী নিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত অটোগাড়ী পাড় হচ্ছে ওই সময় সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়। অটোগাড়ী সহ যাত্রীরা নদীতে পড়ে যায়।খবর পেয়ে স্থানীয়রা অটোগাড়ীটি নদী থেকে তুলে কিনারা আনেন।
উল্লেখ্য গত বছর ২২ জুন একই খালে একই ঠিকাদার নির্মিত হলদিয়াহাট সেতুর উপরে ১৬ জন বরযাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস পারাপারের সময় সেতু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায়।ওই সময় ১০ জন যাত্রী নিহত হয়।
এরপর নড়েচড়ে বসে প্রকৌশলী বিভাগ ও প্রশাসন। উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ শনাক্ত করে সকল প্রকার গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করে সতর্কীকরণ নোটিশ টানিয়ে দেয়া হলেও তা মানছেন না অনেকেই। সোমবার রাতে আবার চন্দ্রা আউয়ালনগর সেতু ব্যাটারিচালিত অটোগাড়ীর চাপে ভেঙ্গে পরেছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চাওড়া ইউনিয়ন পাড়ের সেতুর দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে আছে। হলদিয়া ইউনিয়নের অংশ দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয় নাশির হাওলাদার বলেন, রাতে ডাকাডাকির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি সেতু ভেঙ্গে অটোগাড়ী নদীতে পড়ে গেছে।পরে অটোগাড়ী ও যাত্রীদের কিনারে তুলে আনি।
দুলাল প্যাদা ও জালাল মীর বলেন, সেতুটির দুই তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। অটোগাড়ী ও যাত্রীদের তেমন সমস্যা হয়নি। তারা আরো বলেন, সেতু না থাকায় দুই ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে। দ্রুত এখানে গাডার সেতু নির্মাণের দাবী জানান তারা।
আহত মিরাজ সিপাহি বলেন, গাড়ীটি সেতুর মাঝ বরাবর আসামাত্রই ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাই। কিন্তু কারো কোনো ক্ষতি হয়নি।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আগেই গাড়ী পারাপারে সতর্কীকরণ নোটিশ এবং পিলার গেড়ে দেয়া ছিল।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, সেতু নির্মাণ কালেই ঠিকাদার অনিয়ম করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, গত বছর ওই সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সতর্কীকরণ নোটিশ দেয়া হয়েছিল কিন্তু স্থানীয়রা তা না মেনে সেতুতে গাড়ী নিয়ে ওঠায় এমন অবস্থা হয়েছে।এরপর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর