
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প শুধু প্রাণিজ প্রোটিনের উৎসই নয়, বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি।
গত কয়েক দশকে আমরা পোল্ট্রি খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি দেখেছি। তবে এ শিল্পকে টেকসই করতে হলে আমাদের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। প্রথমত, জিনগত উন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে রোগবালাই ও মহামারির ঝুঁকি কমানো যায়। তৃতীয়ত, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে একটি সবুজ পোল্ট্রি শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও পোল্ট্রি শিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে গবেষণালব্ধ জ্ঞান সরাসরি খামারিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। পাশাপাশি, সরকারি নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে এ খাতের টেকসই বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
আমি আশা করি, এবারের সম্মেলন আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকর নীতির দিকনির্দেশনা দেবে, যা বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ১৩ তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
দুইদিন ব্যাপী ওই সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল "সাস্টেইনেবল পোল্ট্রি ফর ইমার্জিং বাংলাদেশ"। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে সেমিনারটির উদ্বোধনী শেষে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সেমিনারটির সমাপনী হয়।
এবারের সেমিনারে পোল্ট্রি শিল্পে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবেলা করা যাবে সে বিষয়ে ৮৮টি দেশি-বিদেশি টেকনিক্যাল পেপার উপস্থাপন করা হয় এবং ১৮ টি দেশ থেকে গবেষক ও ব্যবসায়ীরা পোল্ট্রি সেমিনারে ও মেলাতে অংশ নেয়।
প্রথম দিনে(১৮ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত সেশনগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইউজিসি প্রফেসর ড. এস.ডি চৌধুরি, বাকৃবি’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, বিএলআরআই এর সাবেক চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. গিয়াসউদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মেম্বার ডিরেক্টর ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বাকৃবি’র প্রফেসর ড. কে.এম. সাইফুল ইসলাম এবং বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. শওকত আলী।
এদিন কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ.টি.এম মাহবুব-ই-এলাহী, বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা, বাকৃবি প্রফেসর ড. সুকুমার সাহা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ড. এ.বি.এম খালেদুজ্জামান, বিএলআরআই এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম এ সামাদ এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার।
দ্বিতীয় দিনের (১৯ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত সেশনগুলোতে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি’র ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. বাহানুর রহমান, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. নাথুরাম সরকার, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) ড. শাকিলা ফারুক, বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. আবুল হাশেম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সুফিয়ান এবং বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. মাহবুব আলম।
কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি প্রফেসর ড. তাহেরা ইয়াসমিন, বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলিম, শেকৃবি প্রফেসর ড. লাম ইয়া আসাদ, রাবি প্রফেসর ড. সায়েদ সরোয়ার জাহান, রাবি প্রফেসর ড.মো. গোলবার হোসাইন এবং বাকৃবি প্রফেসর ড. মো. আরিফুল ইসলাম।
ওয়াপসা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, পোল্ট্রি বিজ্ঞানী, গবেষক, শিক্ষকগণ পোল্ট্রি বিজ্ঞানকে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন সমাধান উপহার দিচ্ছেন। বিগত ২৮ বছর ধরে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা- ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞানীদের মাঝে সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।
বিজ্ঞানী-গবেষকদের কাজ কখনও শেষ হয়ে যায় না কারণ প্রতিটা দিনই এক একটা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়।
জরাজীর্ণতাকে কাটিয়ে নতুন এক সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার ডাক এসেছে আমাদের সবার জন্য। নতুন ও অজেয়কে জয় করার চেষ্টা আমাদের নিত্যদিনের কাজেরই অংশ। সঙ্গত কারণেই আমাদের এবারের সেমিনারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- "সাস্টেইনেবল পোল্ট্রি ফর ইমার্জিং বাংলাদেশ"।
আমাদেরকে সাধারণ খামারিদের কথা ভাবতে হবে কারণ তাঁদের সংখ্যাই বেশি। খামার থেকে শুরু করে খাবারের প্লেট পর্যন্ত পুরো চেইনকেই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে।
ওয়াপসা বাংলাদেশের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। তাই অভিধান থেকে ‘অপুষ্টি’ শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলোই আগামীর বাংলাদেশ, আগামীর পৃথিবী গড়তে সহায়ক হবে।
ভোক্তাদের ধারণা পোল্ট্রিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, ফাইটোজেনিক, এসেন্সিয়াল অয়েল ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর