
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, ইউনুস সাহেব, দেশটা কুয়াশা হয়ে গেছে।
আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ এটা আশা করে না। আপনি বাংলার সুসন্তান। আমি মনে করি দশটা মন্ত্রীকে যোগ করলে আপনি তার চেয়েও লম্বা। আপনি শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য দেশটার সর্বনাশ কইরেন না ইউনুস সাহেব।
এই ছেলে পেলের এখনো চুলদাড়ি উঠছে না। আমি ছেলেদের বাজে কথা বলতে চাই না। কিন্তু যে ছেলেরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বললে সাথে সাথে বেয়াদবের মতো উত্তর দেয়, তাদেরকে বলি একসময় আমি হাসিনাকে বলতাম সাধু সাবধান। যারা এসব করতাছেন তাদেরকে বলছি সাধু সাবধান। এইদিন কিন্তু থাকবে না। দিন কিন্তু আইসা পড়ছে।
এই মুহূর্তে ইলেকশন হলে আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর দয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুই তৃতীয়াংশের ওপরে মেজরিটি পাবে। এটা কেউ ঠেকাইতে পারবে না। সেই দলটাকে আপনারা বঞ্চিত করতে চান, চক্রান্ত করে। এই চক্রান্ত হতে দেয়া যাবে না।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমরা গত ৩ আগস্ট স্লোগান দিয়েছিলাম “এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি। হাসিনা কি স্থানীয় সরকারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিল, সে তো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিল। আমরাতো কেন্দ্রীয় সরকার, পার্লামেন্ট সরকারের পতন চাইছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের পতন চেয়েছিলাম বলেই তো এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন হবে। আমরা হাসিনাকে তাড়াইছি, এখন প্রথমে পার্লামেন্ট সরকার হবে।
তারপর স্থানীয় নির্বাচন হবে। এর বাইরে যারা রঙ বেরঙের কথা বলে, তারা রঙ দেখছে রঙের কৌটা দেখছে না। বেশি বাড়াবাড়ি কইরেন না। শুধু প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য দেশের সর্বনাশ করবেন না। অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণ নির্ধারণ করবে তার বাড়ির পাহারাদার নিয়োগ দিবে।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি অন্য কোন নিবার্চন করার ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করবে। জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বিএনপি কিছুতেই জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত হতে দিবে না।
আন্দোলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে বলেই আমরা প্রথমে জাতীয় সরকারের নির্বাচন দিতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ ভোট পাবে। সে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। বিএনপিকে কোন অবস্থাতেই বঞ্চিত করা যাবেনা।
জামাতে ইসলামীর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জামাত ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে লিপ্ত বলে তিনি বলেন, এই দলটি বেইমান ও মোনাফেকদের দল। অতীতে বিএনপির কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান আরও বলেন, কেউ কেউ মনে করতেছে হাসিনা দিল্লি থেকে বৈজয়ন্তিমালা ট্যাংক নিয়া আসবো। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে দেখা যাবে না আমি বলে গেলাম। শেখ হাসিনার সরকার, আপনি ২০১৪ সনে মানুষকে ভোট দিতে দেন নাই। ১৫৩ টা পার্লামেন্ট সিট বিনা ভোটে নির্বাচিত করেছেন। ২০১৮ সনে আমাদের ধোঁকা দিয়ে নির্বাচনে নিছিলেন। নিয়া আপনি দিনের ভোট রাইতে করছেন। নিশি রাইতের এমপি বানিয়েছেন। ১৮ সনে মানুষকে আপনি বঞ্চিত করছেন। আর ২০২৪ সনের ৭ জানুয়ারি আমি আর ডামির ভোট করছেন। নৌকা আর ট্রাক। কোনো মার্কাই মার্কা না, সব মার্কা হাসিনার মার্কা। সেই ৩ টা নির্বাচনে আজকে যে যুবকের বয়স ৩৬ বছর সে ভোট দিতে পারে নাই। সেই ভোটটা আমরা দিতে চাই।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান আরও বলেন, দেশকে যারা নতুন করে পাকিস্তানের পথে নিয়ে যেতে চায় তাদের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চাই। আমরা কৃষক-শ্রমিকের বাংলাদেশ চাই। এ দেশকে পাকিস্তান বানাতে দেয়া হবেনা। বিএনপির বিরুদ্ধে যে কোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। তাদেরকে তাদের প্রতিহত করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। মুক্তিযুদ্ধকে যারা বিশ্বাস করে না তাদের সাথে বিএনপির কোন আপস নেই। চক্রান্ত করে নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে বিএনপি কাউকে ছাড় দিবে না। কোন অবস্থাতেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে দেয়া হবে না।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রা পথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি এ জনসভার আয়োজন করে।
সমাবেশে অংশ নিতে সকাল থেকেই জেলার ১৩ উপজেলার বিএনপি ও এর সংযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে জমায়েত হতে থাকেন। দুপুর থেকে মিছিল নিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহ মুহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, সদস্য লাইলা বেগম এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টায় জনসভা শুরু হয়। এর আগে দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার-ফেষ্টুনসহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে থাকে। বিকেল নাগাদ বিশাল স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরে যায়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলামের পরিচালনায় জনসভায় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, মো. রুহুল হোসাইন, সহ-সভাপতি মো. আমিরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মো. আবু তাহের মিয়া, সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাকন, মো. আমিনুল ইসলাম আশফাকসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বক্তৃতা করেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর