ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে চরমপন্থিরা। নিহত তিনজনই চরমপন্থি দলের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শৈলকূপা উপজেলার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের প্রত্যেকের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের রাহাজ উদ্দীনের ছেলে আবু হানিফ ওরফে হানিফ আলী (৫৬) ও তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের উম্মাদ আলীর ছেলে লিটন (৩৫)। এর মধ্যে হানিফ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা।

স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ শুনতে পান। এরপর ভয়ে আর কেউ ঘর থেকে বের হননি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ ও দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন। 

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনী নামে দুটি চরমপন্থি দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কালুর নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

জানা যায়, কালুর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে। নিহত হানিফের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি হত্যাসহ বহু মামলা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।

নিহত হানিফ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে হাসিনার সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমা নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন হানিফ।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয় দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দাবি করা হয়, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে যে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিনাকুণ্ডু নিবাসী হানিফ ও তার দুই সহযোগী জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। তাঁদের লাশ রামচন্দ্রপুর ও পিয়ারপুর খালের পাশে রাখা আছে।

শৈলকূপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের মতিয়ার রহমান বলেন, রাতে স্থানীয়রা গোলাগুলির শব্দ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনজনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

শৈলকূপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, সোর্সের মাধ্যমে খবর পাই যে ওই এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় ঘটনাস্থলে তিনজনের মরদেহ পড়ে আছে। মরদেহের পাশে দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তবে তাঁদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না।

শাকিল/সাএ