
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জে আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে নকল ও ভেজাল অরেঞ্জ ও ম্যাংগো ড্রিঙ্কস পাউডার (ট্যাংক) এবং ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদনের মহোৎসব চলছে।
উপজেলা পরিষদের এক কিলোমিটার এর মধ্যে ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানা স্থাপন করা হলেও উপজেলার প্রশাসনের কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে। বিগত সময়ে র্যাবের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করায় এ সমস্ত ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কারখানা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে ৫ ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে র্যাবের মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আবার নতুন করে জেগে উঠেছে।
সরজমিনে ঘুরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী গদাবাগ, মুক্তির বাগ, আমিরাবাগ, নেকরোজ বাগ, খোলামোড়া জিয়ানগর ও তেঘরিয়া এলাকায় বেশ কিছু নকল ও ভেজাল খাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। মুক্তিরবাগ এলাকায় একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু মহিলা শ্রমিক হাতে কোন গ্লাভস্ এবং মাথায় টুপি পরিধান ছাড়াই অরেঞ্জ ড্রিংস পাউডার বোতল জাত করছে।
অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার বাতাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়,সেজন্য ফ্যান বন্ধ করে কাজ করছে। এতে করে শ্রমিকরা ঘেমে একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছে। একজন মহিলা শ্রমিক কিছুক্ষণ পর পর হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছে আবার সেই হাত দিয়েই ড্রিংস পাউডার বোতলের মধ্যে ভরছে।
সেখানে কথা হয় কারখানার ম্যানেজার শাকিল আহমেদের সাথে, তিনি জানান তাদের বিএসটিআই ও পরিবেশ ছাড়পত্র আছে, তবে দেখাতে পারেননি। ল্যাব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটে ল্যাব না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের কাছে রেসিপি আছে, সে অনুযায়ী আমরা ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই।
পরে আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধি পণ্যগুলি বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে। এ সমস্ত ভেজাল ও কৃত্রিম রং মিশ্রিত অরেঞ্জ ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই ভালো, এখানে সবকিছুই হজম হয়ে যায়। কয়েক বছর যাবত তো এই প্রোডাক্ট মার্কেটে বিক্রি করছি কোথা থেকে কখনো কোন দুঃসংবাদ পাইনি।
এছাড়াও তেঘরিয়া ইউনিয়নের তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে নকল ড্রিংকস পাউডার তৈরির পাশাপাশি এসএমসি'র ওরস্যালাইন ও টেস্টি স্যালাইন হুবহু নকল করে তৈরি করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ইবনে সিনা হাসপাতালের নিউট্রিশন বিভাগের প্রধান ডা. জান্নাতুন নেসা জানান, কৃত্রিম রং মিশ্রিত ভেজাল ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য খুব মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকস সবচাইতে বেশি লিভার এবং কিডনিতে আক্রান্ত করে এবং শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। ছোট শিশুদের জন্য এগুলো আরও বেশি ভয়াবহ,কারণ এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
এছাড়া রমজান মাসে রোজাদারদের পানির চাহিদা পূরণ করতে জুস অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে ঘরে তৈরি বিভিন্ন দেশীয় ফলের জুস পান করা উত্তম।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান জানান,খবর পেয়েছি অসাধু ব্যবসায়ীরা উপজেলা বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অবৈধ অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত কারখানা তৈরি করেছে। এ সকল কলকারখানায় অভিযানের জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিলেই আমরা অভিযানে নামবো।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া জানান, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা বড় ধরনের অপরাধ। সহকারী কমিশনার ভূমি ও রাজস্ব দুজনকেই এ বিষয়ে দ্রুত অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর