
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে খাতার উত্তরপত্রে মার্ক টেম্পারিং করে ৬ বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক পদে শিক্ষকতা করা এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তদন্তে প্রভাবিত করে ধীরগতি প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।গেল ১৭ সেপ্টেম্বর ও ২৬ নভেম্বর ২০২৪ নোবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর( উপাচার্য) বরাবর অভিযোগ করেন চাকরি পদে পরীক্ষার ভুক্তভোগী এক নারী প্রার্থী।এর আগেও তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) কাছে তথ্য প্রমাণ দাখিল করে অভিযোগও করেন।অভিযোগের বিষয়টি ইউজিসি তদন্ত করে দেখলেও কিন্তু সেই কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি।তারা সরেজমিন তদন্তে গেলে কমিটির সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রাণিবিদ্যা বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক ও দুইজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সহকারী অধ্যাপক পদে ১৪ জন এবং প্রভাষক পদে ৭৫ জন প্রার্থী আবেদন করে। লিখিত পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর পান নারী প্রার্থী ড. নাহিদ সুলতানা। অপরদিকে আ.শ.ম শরিফুর রহমান ৬ নম্বর পান। শরিফুর রহমানের প্রাপ্ত নম্বর ৬ কাটাছেঁড়া করে ১০ দেখানো হয়। অপরদিকে, নাহিদ সুলতানার প্রাপ্ত নম্বর ১০ কাটাছেঁড়া করে সাড়ে ৭ দেখানো হয়।লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত কম নম্বর কাটাছেঁড়া করে (টেম্পারিং) এবং নম্বর বাড়িয়ে শরিফুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও ড. নাহিদ সুলতানাকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়নি।এমনকি তার প্রাপ্ত নম্বর কাটাছেঁড়া করে (টেম্পারিং) তাকে ফেল দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগকারী ড. নাহিদ সুলতানার অভিযোগ করে জানান,২০১৯ সালের ১৯ মার্চে প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়।পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কয়েকদিন পর জাতীয় পত্রিকা যু গান্তর, প্র থম আলো, কা লের কণ্ঠ পত্রিকার মারফতে জানতে পারি এ নিয়োগ পরীক্ষায় মার্ক টেম্পারিং হয়েছে।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ,শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে অভিযোগ করি।তৎকালীন উপাচার্যের পছন্দের প্রার্থী হওয়ায় অপর পরীক্ষার্থী শরিফুর রহমান লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও নম্বর কাটাছেঁড়া করে তার নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়।অপরদিকে আমার (নাহিদ) নম্বর কাটাছেঁড়া করে (টেম্পারিং) নম্বর কম দেখানো হয় এবং ফেল করানো হয়। লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়নি।৫ আগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর যারা বৈষম্যের শিকার হয়েছে তাদের জন্য ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে।২৪ সালে দুইবার অভিযোগ করেও এখনও তদন্তে কোনো অগ্রগতি দেখি নি।আমার সাথে যে অন্যায় ও বৈষম্য করা হয়েছে আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ন্যায্য বিচার চাই।
মার্ক টেম্পারিং অভিযোগ অস্বীকার করে তৎকালীন পরীক্ষার্থী বর্তমান প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আ.শ.ম শরিফুর রহমান জানান, সে সময় সহকারী অধ্যাপক পদে লিখিত পরীক্ষা হত না।পরে পরীক্ষায় দেরিতেই আসি অন্য কাজ করতে ছিলাম। পরে এসে দেখি পরীক্ষা শুরু হয়েছে ৩০ মিনিট ধরে।প্রথম বলেছিল লিখিত পরীক্ষা হবে না।ভাইভা বোর্ডে প্রশ্নে করেছিল লিখিত পরীক্ষা কেমন হয়েছে।আমি বলি বেশী দেরি করে আসায় পরীক্ষা বেশী ভালো হয় নি।মার্ক টেম্পারিং বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান,মার্ক টেম্পারিং বিষয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি।পরে তৎকালীন ভিসি অহিদুজ্জামান সাথে দেখা করি তিনি বলেন ধৈর্য ধরতে।ভিসি স্যার আমাকে ভালোবাসতেন তিনি বললেন হবে।এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিস্টেমে ভুল থাকতে পারে ।অথরিটি কেন এমন করছে।হিংসার বশবর্তী হয়ে বারবার এ বিষয় নিয়ে আমাকে কেনো বিব্রত অবস্থায় কেনো আমাকে কষ্ট দেওয়া হয়।আমি তো জোর করে চাকরি চাই নি।জোর করে অস্ত্র ধরে আমি কি বলছি আমাকে চাকরি দিতেই হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি আহ্বায়ক ড. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ বলেন, অনেকগুলো অভিযোগ জমা পড়েছে তন্মধ্যে একটি ফাইল এসেছে মার্ক টেম্পারিং বিষয়ে।মূলত এ ফাইল দিয়েই তদন্তে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং অভিযোগগুলোর কাজ শুরু করবো।তদন্ত কমিটির একজন সদস্য আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।তার সাথে কথা হয়েছে সরেজমিনে তিনি আসবেন।অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই-বাছাই করবো।এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা হয়েছে।আশা করি খুব শীঘ্রই অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পারবো।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর