• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১৪ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৪:৩৫ দুপুর
bd24live style=

‘নিরাপদ নিবাসে’ অপ্রতিরোধ্য টেকনাফের মাদক কারবারিরা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

সরকার পরিবর্তনের অধ্যায় শেষ হতে না হতেই বের হয়ে আসতে শুরু করেছে কক্সবাজারের টেকনাফের এক সময়ের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চেহারাগুলো। 

আইন প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে যে সকল ব্যবসায়ীরা অতীতে নিরবে নিবৃত্তে চালিয়েছিলো ইয়াবা ব্যবসা তারা এখন অনেকটাই ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে নেমে পড়েছে।

তার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত নুরুল হুদা মেম্বার অন্যতম। তিনি প্রশাসনের সৎ মনোভাবকে দুর্বলতা ভেবে ইয়াবা পাচারে দ্বিগুণ বেপরোয়া ভাব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এই চিহ্নিত মাদক সম্রাট।

ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা পেয়ে সাম্প্রতিক কালে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নুরুল হুদা মেম্বার। তবে সৌভাগ্যক্রমে তিনি এখন রয়েছেন রাজনৈতিক ‘নিরাপদ নিবাসে’। জনপ্রতিনিধি ও ভদ্রতার মুখোশ পরিধান করে থাকা এ ইয়াবা ব্যবসায়ী এতটাই চতুর যে বাহির থেকে তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানার কোনো সুযোগ রাখেনি। 

ফলে সমাজের সচেতন মহল থেকে শুর- করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত সবার চোখে ধুলো দিয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি বনে যাচ্ছে একেকজন বিশাল বিশাল শিল্পপতি। এমনই যাদুরকাটি তাদের হাতে আছে রীতিমতো বেকুব বনে যান পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। পান না ইয়াবা পাচারের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একযুগ আগে ট্রাকের হেলপার (সহযোগী) ছিলেন নাম নূরুল হুদা মেম্বার। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা পশ্চিম পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে ইয়াবা সম্রাট নুরুল হুদা মেম্বার।

গাড়িতে চাকরি করতে করতে জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা পাচারে। ইয়াবা পাচার করতে করতে হয়ে যান কোটিপতি। টাকা বিনিয়োগ করে মালিক হয়েছেন গাড়ি-বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের। দেশের বিভিন্ন থানায় ইয়াবা, অস্ত্র, হত্যাসহ নানা অপরাধে মামলা রয়েছে ৫০টিরও বেশি। 

সূত্রে জানা গেছে, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল হুদা। কালের আবর্তে পরিস্থিতি বদলে গেলে ফের জামিনে বের হয়ে আসে দুর্ধর্ষ এই মাদক সম্রাট। বন্দুকযুদ্ধে নিহত দেশের শীর্ষ ইয়াবা মাফিয়া হাজী সাইফুলের ডানহাত খ্যাত নুরুল হুদা মেম্বার পূর্বেকার সমস্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করে নতুন করে নব উদ্যোমে সারা দেশে পাচার করে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা।

এমনকি সর্বশেষ গত বছরের ২৯ আগস্ট তার এম্বুলেন্সে করে পাচারকালে একটি ইয়াবার চালান কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়াস্থ আলী আহমদ অটো রাইচ মিলের সামনে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক হয়। এতে প্রায় এককোটি উনষাট লাখ টাকা মূল্যের ৫৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মামলা নং ৭৩/৪৮৭। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মস্বীকৃত ১০২ জন ইয়াবা কারবারির অন্যতম নুরুল হুদা। যিনি ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩ ডজনের বেশি মামলা। এরমধ্যে ঢাকায় রুজু হওয়া একটি মাদক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যার নং ৫২৩/১৩।

গেলো ২০২০ সালের ২ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা এবং ২,৭১,২৫,৩৩৭ টাকার জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলের অপরাধে নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মহানগর দায়রা জজ ও চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আজ আদালতে মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর। যার মামলা নং-৪/২০২০।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশব্যাপী একটি মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন নুরুল হুদা। আত্মসমর্পণ কালে ওই সিন্ডিকেটের হাতে পুরো নেটওয়ার্কের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যান। ফলে কারাগারে থাকাকালীন প্রতিদিন লাখ টাকা খরচ করতেন তিনি। কালো টাকার জোগান থাকায় জামিনে বের হতেও বেগ পেতে হয়নি তার। কারাগার থেকে বের হয়ে কিছুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেন। রীতিমতো বনে যান জনপ্রতিনিধিও। নুরুল হুদার সাথে আত্মসমর্পণকারী অনেক মাদক ব্যবসায়ী জামিনে বের হয়েছে।

যারা পুনরায় মাদক পাচার করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবা ও আইসসহ আবারও আটক হয়েছে। ফলে মাদকের বিস্তার ভয়াবহভাবে বেড়েছে। নির্বিঘ্নে চলতে থাকা এই মাদক কারবারে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে বিদেশি অস্ত্রসহ প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে দেখা যায় বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা। 

সূত্র জানান, নুরুল হুদার রয়েছে দুটি রোহিঙ্গা মাদক পাচারকারী দল। তারাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও উখিয়ার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন পালংখালী থেকে বিপুল সংখ্যক মাদক প্রবেশ করায়।

পরবর্তীতে নুরুল হুদা মাদকগুলো তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে সুকৌশলে পৌঁছে দেন। মাদকগুলো বহন করার কাজে বিলাসী চাহিদা সম্পন্ন উঠতি বয়সী যুবক-যুবতী, এনজিও কর্মী ও বেকারদের সহ কমপক্ষে শতাধিক লোকজনকে তার এই কাজে সহযোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ওই পাচারকারী দলের কেউ আটক হলেও বরাবরেই অধরা থেকে যান নুরুল হুদা। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাত্র ১০ বছর আগে নূরুল হুদা ছিলেন একটি ভাড়া করা গাড়ির চালক। তার পাঁচ ভাই কখনো মাছ ধরে আবার কখনো স্থানীয় লবণ ক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে, ধন্যবাদ মরণনেশা ইয়াবাকে! এর বদৌলতে বদলে গেছে তাদের জীবন। ওঠাবসা আছে অনেক প্রভাবশালীদের সাথে। এখন এই পরিবারের রয়েছে ডজনখানেক ‘বিলাসবহুল’ বাড়ি, একরের পর একর জমি ইত্যাদি। এসব তথ্য জানা যায় পুলিশ এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে।

স্থানীয়দের মতে, নুরুল হুদা টেকনাফের হ্নীলা ৮নং ওয়ার্ডের ৩ বারের নির্বাচিত মেম্বার। গেলো নির্বাচনের ভোটের মাঠে জয়ী হতে প্রচুর কালো টাকা বিনিয়োগ করে নির্বাচনেও বিজয়ী হন। তবে এমন একজন চি‎চিহ্নিত রাষ্ট্রদ্রোহী, চোরাকারবারি, সরকারের আত্মস্বীকৃত ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে যা ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় বলে অভিযোগ তুলেছেন সচেতন মহল।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এককালের সেই হেলপার নুরা আজ শতকোটি টাকার মালিক। হ্নীলার টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের পাশেই তাদের ছয় ভাইয়ের নামে ৬টি নান্দনিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তাদের বাড়ির সংখ্যা ১৪। টেকনাফের হোছ্যারখালের উত্তর পাশে, হ্নীলা আলীখালী, লেদাবাজার এলাকায় হুদার নিজেরই তিনটি বাড়ি। নিজে বসবাস করেন পুরান লেদায়। ফ্ল্যাট আছে চট্টগ্রামে। তবে হ্নীলার দমদমিয়া বিজিবি চেকপোস্ট ঘেঁষে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন ছোট ভাই নূর মোহাম্মদ। যিনি দেশে সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন নূর মোহাম্মদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হ্নীলার জাদিমুড়া থেকে খারাংখালী এলাকা পর্যন্ত নাফ নদীর দুই পাশে ইয়াবার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন নুরুল হুদা। জাদিমোড়া, নয়াপাড়া, মোচনী, লেদা, রঙ্গীখালী, নাটমোড়া পাড়া, হ্নীলা সদর, ওয়াব্রাং ও খারাংখালী পয়েন্ট হয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে তার নামে ইয়াবার চালান আসে। সন্ধ্যার পর এসব খোলা বিলে লোকজনের উপস্থিতি না থাকায় ইয়াবা চোরাচালানের একটি অন্যতম রুটে পরিণত হয়। বর্তমানে নুরুল হুদার একাই প্রায় শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, নুরুল হুদা হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সরওয়ার কামাল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তিনি ও তার সব ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন-পুরনো সবকটি তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী। ২০১৪ সালে আত্মগোপনে থেকে মেম্বার নির্বাচিত হলেও শপথ নিতে পারেননি।

পরে ২০১৬ সালে কোটি টাকা ব্যয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে শপথ গ্রহণের চেষ্টা করেন। পুলিশ জানায়, এরা পারিবারিকভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ী। দ্বিতীয় ভাই শামসুল হুদা যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। নুরুল কবির, সরওয়ারসহ অন্য ভাইরাও ফেরারী।

একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি কীভাবে বীরদর্পে চলাফেরা করে; তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার আদালতের এক আইনজীবী।

বদলে যাওয়া জীবন:

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনরা জানান, নূরুল হুদা’র জীবন বদলে যেতে শুরু করে ২০০৮ সালে। সে বছরে তার বড়ভাই নূর মোহাম্মদ নামেন ইয়াবা ব্যবসায়। এরপর নূর তার তিন ভাই- শামসুল হুদা, নূরুল আফসার এবং নূরুল কবিরকে নামান এই ব্যবসায়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের সম্পদ।

কয়েক বছরের মধ্যে নূর নিজেই তৈরি করেন তিনটি ‘বিলাসবহুল’ বাড়ি। সেগুলো রয়েছে টেকনাফের দামদামিয়া, নাইট্যংপাড়া এবং গুদারবিলে। ২০১৪ সালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নূর মারা যাওয়ার পর থেকে সেই বাড়িগুলোতে এখন আর কেউ থাকেন না।

কয়েক বছর আগে লেডায় রোহিঙ্গা শিবিরের কাছে তাদের আরেক ভাই শামসুল হুদা নিহত হন অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে। আর নূরুল আফসার একটি মাদক মামলায় পাঁচ বছরের কারাভোগ করছেন। গত বছর মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর নূরুল হুদা এবং তার ছোটভাই নূরুল কবির আত্মগোপন করেন। আত্মসমর্পণ কর্মসূচির খবর পেয়ে তারা চলে আসেন প্রকাশ্যে।

প্রতিবেদকের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য করার জন্যে নুরুল হুদা মেম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com