
বাগেরহাট পৌরসভায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পৌরসভা থেকে সরবরাহকৃত পানিতে বিভিন্ন সময়ে দুর্গন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে ভুগছেন পৌরসভার প্রায় দুই লাখ বাসিন্দা।
এমন অবস্থায় সুপেয় পানি সংকট ও দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।
বাগেরহাট পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, বাগেরহাট পৌরসভার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৮ লক্ষ গ্যালন পানি প্রয়োজন হলেও সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫ লক্ষ গ্যালন। এখানে ঘাটতি রয়েছে ৩ লক্ষ গ্যালন। সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের পূর্ব সায়েড়া গ্রাম থেকে পৌরসভার পানি উত্তোলন করা হয়।
সেখান থেকে পানি আসে পৌরসভার দশানী ও বাসাবাটি পদ্মপুকুর এলাকার পানির ট্যাঙ্কে। এই দুই ট্যাংকি থেকেই পানি সরবরাহ করা হয় বাগেরহাট পৌর এলাকায়।
বর্তমানে বাগেরহাট পৌরসভায় পানির গ্রাহক রয়েছে ৬৫৫০ জন, যার মধ্যে ১৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ১২৫৪ জন গ্রাহকের।
এদিকে, বাগেরহাট পৌরভার বাসিন্দারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে পানির গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি পৌরসভার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, ট্যাংকি নিয়মিত পরিষ্কার এবং পৌরসভার পানি সংকট সমাধানে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে পৌরসভার বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাগেরহাট পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোওরাব হোসেন রতন বলেন, পৌরসভার পানির লাইনের সংযোগ নেওয়ার পর থেকে কখনও আমি ঠিকমতো পানি পাই নি। কখনও কখনও সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ দেখা দেয়। পৌরসভার পানি নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন আমার মত এই এলাকার অনেকেই।
পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনিরুল হক মণি বলেন, পৌরসভার পানি ঠিকমতো পাই ই না। এছাড়া পানিতে যে গঁন্ধ তা খাওয়ার উপযুক্ত না। আমরা বাইরে থেকে পানি কিনে খাই। পৌরসভার পানি শুধু গোসলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক বাসিন্দা বলেন, পানি সংযোগ নেওয়ার পর থেকে কখনোই ঠিকমতো পানি পাই নি। যে কারণে পানির বিল দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় পৌর কর্তৃপক্ষ আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে। সুপেয় খাবার পানি বাইরে থেকেই আমাদের কিনে খেতে হয়। শুধু শুধু বিল কেন দিতে যাব। এছাড়া পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিতে যে দুর্গন্ধ তা খাওয়ার মত না।
বাগেরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী টিএম রেজাউল হক রিজভী বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট পৌরসভার পানি সরবরাহ এবং পরিবেশগত স্যানিটেশন উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি এখনো শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি।
এই প্রকল্পের আওতায় শহরের দশানী এলাকার পঁচাদিঘী থেকে পানি উত্তোলন করে পৌর এলাকায় সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু বাগেরহাট জেলা প্রশাসন থেকে পঁচাদিঘীটি আমাদের না দেওয়ায় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার পরেও পঁচাদিঘী থেকে আমরা পানি উত্তোলন করতে পারছি না।
বর্তমানে পৌর এলাকায় সরবরাহকৃত পানির দুর্গন্ধ ও ট্যাংকি পরিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পৌরসভার পানির দুর্গন্ধের বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে সাপ্লাই লাইনের পাইপ অনেক পুরাতন হয়ে যাওয়ায় পানিতে দুর্গন্ধ হতে পারে।
এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস পরপর পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করতে হয়। এর মধ্যে গত বছর একবার পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করা হয়েছিল। প্রতিবার ট্যাংকি পরিষ্কার করতে পৌর কর্তৃপক্ষের দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় নিয়মিত ট্যাংকি পরিষ্কার করা হয় না।
গত বছর পানির ট্যাংকি কত তারিখে এবং কবে নাগাত পরিষ্কার করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। এছাড়া গত এক যুগে কতবার পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চাইলেও তিনি কোন তথ্য দিতে পারেন নি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর