
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, বিগত সময়ে বাংলাদেশে যে দখলদারিত্ব ও পেশিশক্তির রাজনীতি চলেছে ছাত্রদল কোনোদিন সেই রাজনীতি করবে না। আমরা ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাই।
শ্যামল আরো বলেন, বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি থাকবে এবং ছাত্ররাই কেবল তাতে অংশ নিবে। ছাত্রদল অতীতের ন্যায় বিনা প্রয়োজনে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিটিং-মিছিল করবে না। ছাত্র-ছাত্রীরা যে কাজগুলো পছন্দ করবে না ছাত্রদল সে কাজগুলো কোনোদিন করবে না।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সমাবর্তন চত্বরে বাকৃবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবিতে বাকৃবি ছাত্রদলের সদস্য সংগ্রহ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ২০২৪ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা লাভ করেছে। হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অংশগ্রহণ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রায় ৫শ নেতাকর্মী ছাত্রলীগের হাতে গুম ও খুনের শিকার হয়েছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে চলা আন্দোলনে ছাত্রদলের ১৪৩ জন নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন। বিএনপির প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আন্দোলনে মোট শহিদের এক-তৃতীয়াংশ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী।
শ্যামল মালুম আরো বলেন, বিএনপি ও ছাত্রদল একবারও দাবি করে নি আন্দোলনে সফলতার কৃতিত্ব আমাদের। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন এই সফলতার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এদেশের মানুষের।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাকৃবি শাখার আহবায়ক মো. আতিকুর রহমান এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক এ এম শোয়াইব, আরিফুল হাসান আরিফ এবং মো. তরিকুর ইসলাম তুষারসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
এসময় আহবায়ক মো. আতিকুর রহমান বলেন, “শিক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণ, নেশা-মাদকমুক্ত ও হানাহানি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই। প্রশাসন চাইলে ছাত্রদল সহযোগিতা করবে। শিক্ষার্থীদের মতামত জানা ও রাজনৈতিক ভাবনা বুঝতে এ সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ, যা একপ্রকার গণশুনানি। ছাত্রদল রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বরং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা চায়। আধুনিক প্রজন্ম সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক গণমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা করুক, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।”
সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাকৃবি ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল। আমরা সিট বাণিজ্য, গেস্ট রুম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের বিরুদ্ধে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চাই। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় আজকের সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাকসু পুনঃপ্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার মুখোশ উন্মোচন হয়েছে, শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি চায় এই সমাবেশটিই তার প্রমাণ।”
যুগ্ম আহ্বায়ক এ এম শোয়াইব বলেন, “বাকৃবি ছাত্রদল শিক্ষার্থী-বান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে কাজ করছে। আমরা চাই নিরাপদ ক্যাম্পাস, যেখানে কোনো অন্যায়-অত্যাচার থাকবে না। আজকের সমাবেশে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীরা বুঝেছে, ছাত্রদল নৈরাজ্য ও ক্যাডার রাজনীতি চায় না। তারা এখন রাজনীতি উন্মুক্ত ও বাকসু পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছে, ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে। তাই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশ নিয়েছে।”
যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তরিকুর ইসলাম তুষার বলেন, “বাকৃবি ছাত্রদলের ইতিহাস গৌরবের। আমরা এ.টি.এম খালেদের উত্তরসূরি। ভিপি চঞ্চল, শামীম, তোফা ও তুহিন ভাইরা বাকৃবি ছাত্রদলের সোনালী ফসল ও আমাদের আদর্শ। শিক্ষার্থীদের জন্য ডর-ভয়হীন, গবেষণাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই। ছাত্র সমাবেশ স্বাধীন মত প্রকাশ ও ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম। ৫ আগস্টের পর যারা রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চেয়েছিল, তারাই (শিবির) একে পুঁজি করে রাজনীতি করছে। শিক্ষার্থীরা বুঝেছে, ছাত্রদলই তাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে। বাকৃবি ছাত্রদল স্বার্থপর ও দখলদারিত্বের রাজনীতি বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে তাদের মাথার তাজ করে রাখবে।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর