
ফাগুনের স্নিগ্ধ স্পর্শে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি, প্রাণ পেয়েছে হৃদয়। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনি বার্তা বয়ে আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে উৎসবের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠছিল চারদিক।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ষষ্ঠবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের আয়োজনে গান, নৃত্য, আবৃত্তি ও সংস্কৃতির অনিন্দ্য রূপে উদ্যাপিত হয়েছে বসন্ত উৎসব ১৪৩১। দিনব্যাপী এই উৎসবে প্রাণ পেয়েছে বাংলার মাটি ও মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য। গ্রামীণ লোকজ মেলা যেন নগর জীবনের কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া এক টুকরো শৈশবকে ফিরিয়ে এনেছিল। মেলার প্রতিটি আয়োজনে ছড়িয়ে ছিল বাংলার লোকসংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন রঙিন নাগরদোলার ঘূর্ণিতে মিশেছিল উচ্ছ্বাস, পুতুল নাচের ছন্দে দোলা লেগেছিল শিশুমনে আর বায়োস্কোপের ফ্রেমে ধরা পড়েছিল হারিয়ে যাওয়া দিনের গল্প।
পুঁথিপাঠের সুরেলা আবৃত্তি আর কীর্তনের ভক্তিময় সুর মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক অপূর্ব আবহ। হাতে তৈরি অলংকার, নকশাদার পোশাক আর দেশীয় খাবারের বাহারি পসরায় মেলা যেন হয়ে উঠেছিল এক মাটির মঞ্চ, যেখানে মিশে ছিল বাংলার প্রাণের ছোঁয়া। সন্ধ্যার পর উৎসব পেল নতুন মাত্রা, তারকা শিল্পীদের সুরেলা সংগীত, নৃত্যের মুদ্রা আর আবৃত্তির আবেগে মুখরিত হয়ে উঠেছিল চারপাশ। শহরের ব্যস্ততার মাঝে এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল এক ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচিত্র, যেখানে মিশে ছিল মাটির সুর, লোকজ সংস্কৃতির সৌরত আর বসন্তের অক্ষরে উচ্ছ্বাস।
দুপুর আড়াইটায় আলোচনা ও গুণিজন সম্মাননা পর্বে প্র প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এসময় তিনি বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে এমন একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। দেশের চলমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই ধরনের আয়োজন আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে, আমাদের উজ্জীবিত করে, আমাদের মানবীয় সত্তাকে জাগ্রত করে।
মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ডা মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, এই ধরনের উদ্যাপন গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরা নিজেদের জাতিসত্তাকে হারিয়ে ফেলছি দিনদিন। তাই যেই তরুণরা সংস্কৃতিকে ধরে রাখছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
এবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গুণীজন সম্মাননা গ্রহণ করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অভিনয় ও নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর এবং 'নৃবিজ্ঞান' বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সভাপতি নাফিয়া ফারজানা অমিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাকামনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সবশেষ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এছাড়া কনসার্টে জনপ্রিয় ব্যান্ড 'বায়োস্কোপ' এবং 'গানের দল ও কৃষ্ণকলি'র সঙ্গীত পরিবেশনা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর