
আওয়ামী লীগ নেতা জুবের আহমদ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় দাপট খাটিয়ে নানা অপকর্ম করে বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আবার তিনি কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্যপ্রার্থী সরওয়ার হোসেনের ভাগনে।
জুবের আহমদ সরওয়ার হোসেনর ভাগনে হওয়ার সুবাদে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত শেখ হাসিনার ও তার বিভিন্ন মন্ত্রীদের সাথে ছিল গভীর সম্পর্ক। গণভবনে নিয়মিত যাতায়াত ছিল কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরয়োর হোসেনর তাঁর সঙ্গে প্রায় সফরসঙ্গী থাকতেন তার ভাগনে জুবের।
তাছাড়া ৩ ও ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্রধারী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, ৩৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, ৩৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগ ক্যাডার বাবলা চৌধুরী ও বিয়ানবীজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব জুবের আহমদরে অন্যতম সহযোগী। জুবের তাদের ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করত চোরাচালান, দখল, চাঁবাদাজী।
তাছাড়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন ঠেকাতে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়াগায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার লিস্ট পাঠাতেন জুবের আহমদ। সেই সুবাদে এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররাদের আশ্রয়-প্রশয়ে এখন আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে কানাডা আওয়ামী লীগের ভাগনে জুবের আহমদের বিরুদ্ধে।
কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের ভাগনে জুবের আহমদ ধরাকে সরা জ্ঞান করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেটে চালিয়েছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলেই মামলা ও হামলার শিকার হতে হত বলে একাধিক ভোক্তভূগি অভিযোগ করেছেন।
আলোচিত এই আওয়ামী লীগ নেতা ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনের ভাগনে জুবের আহমদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার গল্লাসাংগ গ্রামের শফিক উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে জুবের আহমদ খাদিমপাড়া এলাকায় বসবাস করে আসছেন।
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মামা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনও কানাডা পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ নেতা জুবেরও কিছুদিন পলাতক ছিলেন। কিছুদিন পলাতক থাকার পর ফের কিছু প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় আবারো আসেন প্রকাশ্যে। চতুর জুবের আহমদ দেশে থেকে তার মামার কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার হোসেনের সবকিছু দেখাশুনা করেন। তাছাড়া শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পাটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতা জুবের আহমদ তৈরী করেছেন নিজস্ব একটি বাহিনী। সেই বাহিনী দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি দখল, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, অন্যের জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কাটাসহ বিভিন্ন কুকর্ম। আর তার এসব কুকর্মে সহযোগিতা করছে ফ্যাসিস্ট যুবলীগ নেতা বাবলা চৌধুরী, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল, সাধারণ সম্পাদক রাহেল, কাউন্সিলর রুহেল ও জাহাঙ্গীর ও তার মামা সারোয়ারের সন্ত্রাসীরা এখনও তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। জুবের আহমদ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশের নাকের ডগায় দিয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, পালিয়ে যাওয়া অনেক নেতাদের সাথে তার যোগাযোগ হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে, এছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জুবের আওয়ামী লীগের খবরওয়ালা হিসেবে কাজ করছেন।
সূত্রে জানা যায়, যে বাড়িতে জুবের বর্তমানে বসবাস করছেন সেটি একটি প্রবাসীর বাড়ি। যে বাড়িটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ আমলে জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছিল তিনি। এছাড়া ও একাধিক বাড়ি দখলের অভিযোগ রয়েছে লোকমুখে।
এছাড়া নাজমুল ও রাহেলের সাথে মিলেমিশে চোরাচালান ব্যবসা পরিচালনা করেছেন বলে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে জুবের ভারতের খাসিয়া নারীকে বিয়ে করে সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন চোরাচালান। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় জুবের ও তার বন্ধু লোকমানের বিরুদ্ধে সাবেক বিচারপতি মানিক ও যুবলীগ নেতা পান্নাকে ভারতে পাঠানোর গুঞ্জন চলছে।
তাছাড়া তিনি ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্ক। মামা কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে পাঠানো হত কারাগারে। বাবলা চৌধুরী ও বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র আবুল কাশেম পল্লবের নেতৃত্বে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।
খাদিমপাড়া, বাইপাস, শাহপরাণ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার এলাকায় তার নেতৃত্বেই সবকিছু ঘটতে। জুলাই অভ্যুত্থানেও ছাত্রদের বিপক্ষে থেকে তার বাহিনী দিয়ে চালিয়েছেন হামলা। কিন্তু এতসব অভিযোগের পরও জুবের আহমদ এখনও বহাল তবিয়তে।
এলাকায় বলে বেড়ান তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। এখনো তিনি তার রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন খাদিমপাড়া এলাকায়। তবে জুবের এখন তার কৌশল পাল্টিয়েছেন। প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাকে সহযোগিতা করছেন। তবে জুবেরের এমন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোতে ক্ষুব্ধ বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা মারুফ আহমদ জানান, ৫ আগস্টের আগে জুবের তার কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন ও যুবলীগ নেতা বাবলা চৌধুরীর দাপট দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন করছেন। সে এখনো অধরা,প্রশাসন কী করছেন, এটা আমার প্রশ্ন ? এটা জুলাই আন্দোলনের শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি।
নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা কাহের আহমদ জানান, জুবের খাদিমপাড়া এলাকায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন দাপটের সাথে চলেছেন এখনো চলছেন। সারোওয়ার ও বাবলা চৌধুরীর মাধ্যমে জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, মাটি কেটে বিক্রি করেছেন, মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। এখনো সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা অতিদ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, আমি জুবের আহমদকে চিনি। তিনি ঠিকাদারি করে। আমাদের সাথে ভাল সম্পর্ক রয়েছে তার।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর