
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর এক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক পতাকী রঞ্জন দাস (৬৭) এই মামলা দায়ের করেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মল্লিক মো. মঈন উদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হেমায়েত উদ্দিন অভিযোগ আমলে নিয়েছেন।
মামলার বাদী পতাকী রঞ্জন দাস জানান, "হাওরে আমার অনেক জমি। হাওরের কৃষকদের স্বার্থে আমি এই মামলা করেছি। হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কৃষকের একমাত্র বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এই অনিয়মের কারণেই কাজের গাফিলতি হয়।"
নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গঠিত উপজেলা কমিটির সভাপতি ইউএনও এবং সদস্যসচিব হচ্ছেন পাউবো এর উপসহকারী প্রকৌশলী।
মামলার আসামিরা হলেন শাল্লার সাবেক ইউএনও এস এম তারেক সুলতান, শাল্লার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী রিপন আলী; শাল্লা উপজেলায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের ২২ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি মো. হাসিম উদ্দিন, সদস্যসচিব মিনাদুল মিয়া; ৫৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি মজনু মিয়া, সদস্যসচিব ফজলুল হক; ২৪ নম্বর পিআইসির সভাপতি কালাম মিয়া, সদস্যসচিব ফজল মিয়া; ৪৫ নম্বর পিআইসির সভাপতি আবদুল কাদির মিয়া, সদস্যসচিব সরাফত আলী; ৭৭ নম্বর পিআইসির সভাপতি কালীপদ দাস, সদস্যসচিব প্রভাত দাস; ৭৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি সুজিত চন্দ্র দাস, সদস্যসচিব সমীরণ দাস; ৫৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি দীপক চন্দ্র দাস ও সদস্যসচিব পবিত্র মোহন দাস।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নীতিমালা (কাবিটা) অনুযায়ী স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে পিআইসির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু উল্লেখিত অনেক পিআইসির সভাপতি ও সদস্যসচিব হাওরের বাঁধের পার্শ্ববর্তী জমির মালিক নন এবং উপকারভোগীও নন। এই কারণে পিআইসিগুলো নীতিমালাবহির্ভূতভাবে গঠিত হয়েছে।
এ ছাড়া, নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে পিআইসি গঠন করে বাঁধের কাজ না করে সরকারি টাকা আত্মসাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই সময়সীমা আগামীকাল শুক্রবার শেষ হবে। সুনামগঞ্জে ১২টি উপজেলায় ৫৩টি হাওরে ৬৮৬ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে এবং এ জন্য প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা।
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন হাওলাদার জানান, "আমাদের বাঁধের কাজের অগ্রগতি ৯০ ভাগ হয়েছে, তবে সাত দিন সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। এই সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে।"
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর