
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল সহ ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্সের ৪৭৫টি পদের বিপরীতে ২৫০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
এর মধ্যে ১৬৭টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে ৮২ জন কর্মরত রয়েছে, শূন্য রয়েছে আরও ৮৫টি পদ। আর ৩০৮টি নার্সের পদের বিপরীতে ১৪৩ জন নার্স কর্মরত রয়েছে, শূন্য পদ রয়েছে ১৬৫টি।
এছাড়াও মিডওয়াইফে ৩৯টি পদের বিপরীতে ৩৪টি পদই ফাঁকা। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫জন করে মিডওয়াইফ পোস্ট থাকলেও ৭টি উপজেলায় কোন পদায়ন নেই।
চিকিৎসকের ৮৫টি শূন্য পদের মধ্যে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ৫৬টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালেই শূন্য পদ রয়েছে ৪২টি।
এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), প্যাথলজিস্ট, ইএনটি (নাক, কান, গলা), রেডিওলজিস্ট, রেডিওলজি ইমেজিং, নিউরি সার্জারি, পালমোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন পদে কোনো চিকিৎসক নেই। ফলে চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার প্রত্যন্ত এলাকার সাড়ে ৭ লাখ বাসিন্দা।
খাগড়াছড়িতে যে ৮২জন চিকিৎসক পোস্টিং রয়েছে এর মধ্যে আবার ১২জন চিকিৎসক সুবিধামতো বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন। তাহলে পুরো জেলায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৭০জন।
মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মিল্টন বড়ুয়ার খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে পোস্টিং থাকলেও তিনি ২৫০ শয্যা আন্দরকিল্লা জেনারেল হসপিটালে প্রেষণে রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থিসিয়া) পদে ডা. লাকি দে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পোস্টিং হলে তিনিও প্রেষণে রয়েছে ২৫০ শয্যা আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে। এভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা সহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেষণে রয়েছেন তারা।
খোদ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মেডিক্যাল অফিসার পদে ৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ২টি পদে চিকিৎসক নেই। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), গাইনি, শৈল্য ও অ্যানেস্থেশিয়া পদে কোনো চিকিৎসক নেই। এ হাসপাতালে ১০টির মধ্যে ৪জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৩জন চিকিৎসক এবং পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ২জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এসব পদে কোন চিকিৎসক নেই।
রামগড় উপজেলায় ১০জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩জন। বাকি পদগুলো ফাঁকা। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ২টি পদই শূন্য। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯জন চিকিৎসকের মধ্যে ২টি পদ শূন্য। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ২টির মধ্যে ১টি শূন্য। মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩টি চিকিৎসক পদ শূন্য।
পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টি চিকিৎসক পদ শূন্য। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২৩ সাল থেকে একজন মেডিকেল অফিসার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৯টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ১টি পদ শূন্য।
এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যারা রয়েছেন, তারাও কর্মস্থলে নিয়মিত থাকেন না। এ অবস্থা জেলার সকল উপজেলাগুলোতে বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এর মধ্যে অনেক চিকিৎসক খাগড়াছড়িতে পোস্টিং নিয়ে এসে যোগদানের পর আবার চলে গেছেন।
এদিকে চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সেরও তীব্র সংকট রয়েছে। ৩০৮টি নার্সের পদের বিপরীতে ১৪৩ জন নার্স কর্মরত রয়েছে, শূন্য পদ রয়েছে ১৬৫টি। এর মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪১টি পদের বিপরীতে ১০ জন নার্স কর্মরত রয়েছে, এখানে ৩১টি পদই ফাঁকা। পানছড়ি উপজেলায় ৩২টি পদের বিপরীতে ৮জন কর্মরত রয়েছে, এখানে শূন্য পদ রয়েছে ২৪টি।
দীঘিনালায় ৩২টি পদের বিপরীতে ১৭ জন কর্মরত রয়েছে, পদ শূন্য রয়েছে আরও ১৭টি। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ৩১টি পদের বিপরীতে ৬ জন কর্মরত রয়েছে, পদ শূন্য রয়েছে ২৫টি। মহালছড়ি উপজেলায় ৩২টি পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত রয়েছে, পদ শূন্য রয়েছে ২২টি। মানিকছড়ি উপজেলায় ৩০টি পদের বিপরীতে ১১ জন কর্মরত, পদ শূন্য রয়েছে ১৯টি। রামগড় উপজেলায় ৩৩টি পদের বিপরীতে ১৫ জন কর্মরত রয়েছে, পদ শূন্য রয়েছে ১৮টি। খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ৭৪টি পদের বিপরীতে ৬৬ জন কর্মরত রয়েছে, এখানে ৮টি পদ শূন্য রয়েছে।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসকরা রোগীদের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে সিটিস্ক্যান সুবিধা না থাকায় স্ট্রোকসহ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের পরীক্ষা বা আঘাত শনাক্তের জন্য প্রায়ই চট্টগ্রামে স্থানান্তর করতে হয়। অনেক রোগী চট্টগ্রামে নেয়ার পথেই কিংবা সেখানে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মারা যান।
এতে আর্থিকভাবেও চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। ফলে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে সিটিস্ক্যান, আইসিইউ এবং ফিজিওথেরাপির সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডা. মো. ছাবের বলেন, 'খাগড়াছড়ি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। খাগড়াছড়ি জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার উপজেলাগুলো থেকেও রোগী আসে এ হাসপাতালে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক খুবই কম রয়েছে। অনেক চিকিৎসকের পোস্টিং হলেও তারা এখানে থাকতে চায়না। বর্তমানে প্রায় ১২ জন চিকিৎসক অন্য জায়গায় প্রেষণে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসক নেই। নার্স এবং মিডওয়াইফের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও অনেক পদ শূন্য। যে কয়জন চিকিৎসক রয়েছেন তারা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দিয়েছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর