
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় মাঠের পর মাঠ বিস্তৃত তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট বড় আগাম জাতের তরমুজ। চাষিরা প্রত্যেক বছরে একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে এই তরমুজ চাষ করে থাকেন।
বিশেষ করে এই বছরে চাষিরা রমজানকে সামনে রেখেই আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। তরমুজের জাত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে তরমুজ পাকতে ৮০ থেকে ১০০ দিন সময় লাগে। এমন একটি সময় তরমুজ পাকে যে সময়টিতে পর্যাপ্ত গরম থাকে। প্রচণ্ড গরমের দিনগুলোতে বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য তরমুজ কিনেন।
কারণ তরমুজ একটি রসালো ফল। ফলে তরমুজের চাহিদা বেশি থাকায় চাষিরাও লাভবান হন। তাই এই বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজ চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন চরফ্যাশনের আগাম জাতের তরমুজ চাষিরা।
চরফ্যাশন কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি। তবে ১০ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। এই বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে আগাম জাতের তরমুজসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
জানা গেছে, তরমুজ কিনার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কৃষক আগাম জাতের তরমুজ সংগ্রহ করে নিজ খরচে আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন। এই বছরে তারা বেশি দামে তরমুজ বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী।
এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে বলেও আশা তাদের। বর্তমানে প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কেজি। রমজানের ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহের মধ্যেই তরমুজ সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারবেন কৃষকরা।
উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের তরমুজ চাষি মো. ছালেম মাল জানান, আমি এই বছর চার একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছি। ফল আসা পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হবে।
আহাম্মদপুর ইউনিয়নের চাষি মো. জালাল মৃধা জানান, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে এই বছরে তিন একর জমিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছি এবং ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে প্রায় ১৫ কেজি। পাইকররাও আসতে শুরু করেছে।
মুজবিনগর ইউনিয়নের তরমুজ চাষি মো. জাকির হোসেন বলেন, এই বছরে তার আগাম জাতের তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। সে ২ একর ৪০ শতাংশ জমির আগাম জাতের তরমুজ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। তবে বেশি দামে বিক্রি করবেন বলে আশাবাদী তিনি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, কৃষকরা আগাম তরমুজের মধ্যে থাই সুপার ও গ্রেড ওয়ানসহ বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের তরমুজের বীজ বপন করে থাকেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে তরমুজ গ্রেড হয়ে যায়। এবং কৃষকরা তরমুজ বিক্রি করে বেশ লাভ হন।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমুল হুদা জানান, চরফ্যাশন উপজেলা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। এখানের কৃষকরা পবিত্র রমজান মাসকে টার্গেট করে বেশি লাভের আশায় এবার আগাম তরমুজ চাষ করেছেন এবং ফলন ও হয়েছে বেশ ভালো।
ইতোমধ্যে সীমিত আকারে তরমুজ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। রমজানের ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহের মধ্যেই তরমুজ চাষীরা তাদের উৎপাদিত তরমুজ সংগ্রহ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারবেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তরমুজের ফলন খুবই ভালো হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা যায়। আমরা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে সকল কর্মকর্তারা তরমুজ চাষীদের পাশে থেকে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি যাতে কোনোভাবেই কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর