সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে কাল শনিবার (১ মার্চ) থেকে দেশটিতে শুরু হচ্ছে পবিত্র ও মহিমান্বিত এ মাস। এছাাড় সংযুক্ত আরব আমিরাতেও রমজানের চাঁদের দেখা মিলেছে। সৌদিতে যেদিন চাঁদ দেখা যায়, এর পরের দিন সাধারণত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেলে চাঁদের দেখা। এরপর প্রথম রমজানের সেহরি গ্রহণ করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
দুই পবিত্র মসজিদভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে জানায়, পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে সূর্য অস্ত গেছে, তবে ওই অঞ্চলে চাঁদ দেখা যায়নি। কিন্তু ওই সময়ও দেশের অন্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে অনুসন্ধান অব্যাহত থাকে। এরপর ৫টা ৫৭ মিনিটে তারা চাঁদ দেখতে পাওয়ার খবর দেয়।
এরআগে স্থানীয় সময় দুপুরে সাধারণ মানুষকে আবারও খালি চোখে অথবা দুরবীন ব্যবহার করে চাঁদ দেখার আহ্বান জানানো হয়। ওই সময় বলা হয়, কেউ যদি চাঁদ দেখে থাকেন তিনি যেন নিকটস্থ কোর্টে অবহিত করেন।
যুক্তরাজ্যের নটিক্যাল আলমানাক অফিস পরিচালিত চাঁদ বিষয়ক সংস্থা ‘ক্রিসেন্ট মুন ওয়াচ’ জানিয়েছে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে ১ মার্চ বিশ্বের প্রায় সব দেশে পবিত্র এ মাসের চাঁদ দেখা যাবে। যার অর্থ, ‘গ্লোবাল সাউথের’ দেশগুলোয় ২ মার্চ থেকে রমজান শুরু হবে।
চন্দ্রমাসগুলো মূলত ২৯ ও ৩০ দিনের হয়ে থাকে। এই বর্ষপঞ্জিকার প্রতিমাসের ২৯তম দিনে নতুন চাঁদের সন্ধান করা হয়। যদি ওইদিন চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে মাসটি ৩০ দিনের হয়।
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস হলো রমজান। এই মাস মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। রমজান মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করা হয়। এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। রমজানের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছিল। ফলে মাসটি শুধু সিয়াম সাধনার জন্য নয়, বরং কুরআন অধ্যয়ন ও দান-সদকার জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত।
মুসলিমরা এই মাসে নামাজ, তারাবিহ, ইফতার ও সাহরির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন। এছাড়া গরিব-দুঃখীদের সাহায্যের মাধ্যমে সমাজে একধরনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার চর্চা দেখা যায়।
জ্যোতির্বিদ ইব্রাহিম আল জারওয়ানের মতে, ২০২৫ সালের রমজান মাস যদি ২৯ দিনে শেষ হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদুল ফিতর পালিত হবে ৩০ মার্চ। তবে যদি রমজান ৩০ দিনে হয়, তাহলে ঈদ হবে ৩১ মার্চ।
বাংলাদেশে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর একদিন পর রমজান ও ঈদ উদযাপিত হয়। এর কারণ চাঁদ দেখার ভৌগোলিক পার্থক্য। বাংলাদেশ চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করে, যা প্রতিটি মাসের চাঁদ দেখার ঘোষণা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ একদিন পর দেখা যায়। ফলে রমজান মাস শুরু ও ঈদুল ফিতর পালনের তারিখও একদিন পিছিয়ে যায়। সেই অনুযায়ী দেশে রমজান শুরু ২ মার্চ এবং ইদ শুরু ৩১ মার্চ বা ১ এপ্রিল।
রমজান ও ঈদ নির্ধারণে চাঁদ দেখা মুসলিম ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও আধুনিক যন্ত্রপাতি ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্যে আগেভাগেই চাঁদের অবস্থান নির্ধারণ করা সম্ভব, তবে অনেক দেশেই এখনো স্থানীয় পর্যায়ে খালি চোখে চাঁদ দেখার ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়। বাংলাদেশেও এই ঐতিহ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
চাঁদ দেখার এই ঐতিহ্য একদিকে যেমন ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত, অন্যদিকে এটি সামাজিক ঐক্যের একটি প্রতীক। চাঁদ দেখার ঘোষণার পর সারাদেশে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। ঈদের আগের রাতকে ‘চাঁদ রাত’ বলা হয়, যা মুসলিম সংস্কৃতিতে অত্যন্ত আনন্দঘন।
রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে ও চলাকালীন সময় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। কারণ, এই সময় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে এটি অত্যন্ত জরুরি। এবারের রমজান মাস ও ঈদের নির্ধারিত তারিখ নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে চাঁদ দেখার পর। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও বাংলাদেশের তারিখের পার্থক্যের বিষয়টি মাথায় রেখে মুসলিম উম্মাহকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সূত্র: গালফ নিউজ
বাঁধন/সিইচা/সাএ