
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই রাজধানীর সড়কে যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার অংশ হিসেবে তারা রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
পড়ালেখার পাশাপাশি দেশসেবার সঙ্গে আর্থিকভাবেও শিক্ষার্থীরা লাভবান হচ্ছেন। কারণ দৈনিক চার ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে তারা সম্মানী পান ৫০০ টাকা। তবে এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে দুই শিফটে ২৯০ জন শিক্ষার্থী ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক শিফট, আর বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই দুই শিফটে তারা কাজ করছেন। একজন শিক্ষার্থী এক সপ্তাহ এক স্থানে কাজ করার পর তাদের স্থান পরিবর্তন করা হয়।
প্রতিদিন সকালে কাজে যোগদান করার সময় ও কাজ শেষে যাওয়ার সময় নির্দিষ্ট খাতায় স্বাক্ষর করতে হয়। আর এই কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের দৈনিক ৫০০ টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। এই টাকা মাস শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
আজ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান।
একই সঙ্গে বেড়েছে তাপমাত্রা। এর মাঝেও শিক্ষার্থীরা রোজা রেখেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। কষ্ট ও নানা কটু কথা শুনেও জনগণের ভোগান্তি নিরসনে তারা এখনো রাস্তায়। রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় আসাদগেট। অন্য দিনের মতো আজও সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ইডেন মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী।
পার্টটাইম হিসেবে গত দুই মাস ধরে চার ঘণ্টা করে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাকে নানা কটু কথা শুনতে হচ্ছে। প্রায়শই চালকরা তাকে নানা বাজে কথা বলেন। তবুও দেশের কথা চিন্তা করে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মূল সড়কে রিকশা উঠতে না দেওয়া, নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামানো, হেলমেট ছাড়া বাইক চলাচল— এসব বিষয়ে রোজা রেখেই তাকে তদারকি করতে দেখা যায়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের এ কাজ সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশে একটু অস্বস্তি বোধ করেন।
তাই নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আমি গত দুই মাস ধরেই আসাদ এভিনিউ ও আসাদগেটে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। রোজার মাস শুরু হয়েছে। এ মাসে এমনিতেই কষ্ট বেড়ে যায়। তবে কষ্ট হলেও দায়িত্ববোধ থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এ কাজ অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে অনেক সময় বাস ও বাইকচালকরা আমাকে কটু কথা শোনান। তারা আমাদের এই কাজকে ভালোভাবে নেন না। কারণ আমরা থাকলে তাদের আইন মানতে বাধ্য করি। ফলে অনেক সময় তারা আমাদের ওপর রাগান্বিত হন। এসব শুনেও আমরা দেশের স্বার্থে এই কাজ করে যাচ্ছি।’
ট্রাফিকে গত দুই মাসের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘এই দায়িত্ব পালন অনেক কঠিন। কারণ রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করে। যাত্রী থেকে চালক— সবার মধ্যেই আইন মানার বিষয়ে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই যাত্রীছাউনি রয়েছে। তবুও যাত্রীরা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বাসে ওঠার চেষ্টা করেন।
এই সুযোগে বাসচালকরাও রাস্তার মধ্যে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করান। যেটা আইনের লঙ্ঘন। আমার মতে, যাত্রী ও চালক দুই পক্ষকেই আইন মানার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। তাহলে রাজধানীর যানজট এমনিতেই কমে যাবে।’
এদিকে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক কুড়িল থেকে গুলশান— এ সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গরম উপেক্ষা ও রোজা রেখেই তাদের রাস্তায় কাজ করতে দেখা গেছে। রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে দুই লেনে গাড়ি যাওয়ার কাজটি তারা করে যাচ্ছেন।
রোজা রেখে এ দায়িত্ব সামলানো কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কষ্ট হলেও নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যত দিন রাস্তায় শৃঙ্খলা না ফিরবে, তত দিন আমরা রাস্তায় থাকব।’
এসব বিষয় নিয়ে আসাদ এভিনিউতে দায়িত্বরত পুলিশের সার্জেন্ট বলেন, ‘আসাদ এভিনিউতে বিকেলের শিফটে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন।
তবে সকালে আসাদ গেট, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কাজ করায় অনেক উপকার হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব সম্পর্কে তারা বিস্তারিত জানার সুযোগ পাচ্ছেন।
এই বিষয়গুলো তারা সহপাঠীদের সঙ্গে শেয়ার করছেন, এতে ট্রাফিক নিয়ম মানার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর