
দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ইদগাহ ময়দানের ইদ জামাতের ইমাম হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়েছে মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে শোলাকিয়া ইদগাহ মাঠের ইমামতি থেকে তাকে সড়িয়ে দেওয়া হয়।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও শোলাকিয়া ইদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. এরশাদ মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ জেলাবাসীসহ মুসল্লীদের দাবি অনুযায়ী ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ইদগাহ ময়দানের সাবেক ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহকে পুনরায় ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ কে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ইদগাহ ময়দানের ইমামতি পুনর্বহাল করায় সোশাল মিডিয়াতে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছার জুয়ার শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তাকে সরিয়ে দেয়। পাশাপাশি মোতাওয়াল্লীর অধিকারকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওয়াক্ফ দলিলের তোয়াক্কা না করে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন। সে সময় এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় হওয়া একটি হত্যা মামলার তাকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ইদগাহ মাঠে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর ১৯৮তম জামাত উদ্যাপন উপলক্ষ্যে রোববার (২মার্চ) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও ইদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান। এতে জামাত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এবারও শোলাকিয়ায় পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর জামাত সকাল ১০টা অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি ছাড়াও সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া ইদ স্পেশাল’ নামে ২টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে।
প্রস্তুতিমূলক সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর রায়হান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মোস্তারী কাদেরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলী, পিপি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, জিপি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাক, ইসলামি আন্দোলনের জেলা সভাপতি আলমগীর হোসাইন তালুকদার, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাও. নাজমুল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, সদস্য সচিব মো. ফয়সাল প্রিন্স, প্রমুখসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহর আগে তার পিতা মাওলানা এ কে এম নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহের অবৈতনিক ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর