
সুনামগঞ্জের সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজার গুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। তবে দামের অস্থিরতায় চোখে মুখে,কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ। বাধ্য হয়েই অনেকেই বেশি দামে জিনিসপত্র ক্রয় করে বাড়ি ফিরেছেন।
অন্যদিকে বাজারে বেশকিছু দিন ধরেই সংকট দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের। সরবরাহ কম থাকায় সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে রমজানকে উপলক্ষ্য করে বাজারে দেশি মাছ, মুরগি, লেবু, শসার দামও বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে দোকানে স্বল্প পরিমাণে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। দোকানে ১ লিটার তেলের বোতল সামান্য পরিমাণ থাকলেও ২ লিটার ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বাজার থেকে একেবারেই উধাও। কোম্পানির ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ না করায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের। ক্রেতাদের কেউ কেউ দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় পুরো মাসের জন্য বাজার একসঙ্গে করছেন,কেউ আবার দু-এক সপ্তাহের জন্য কিনছেন তেল,ছোলা,পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানান ধরনের পণ্য।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন,বাজারে তেলের সংকট নতুন নয়, ৩-৪ মাস ধরেই এই সংকট চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে পবিত্র রমজানে সয়াবিন তেলের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে থাকে। তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন,বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সবকিছুর দাম বাড়াচ্ছে দোকানিরা। দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে রমজান মাসকে দেখিয়ে ইচ্ছে মতো তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। সব ধরনের পণ্যের দাম নাগালে আনতে বাজারে কঠোর মনিটরিং করার দাবি ক্রেতাদের।
এদিকে রমজান শুরুর সাথে সাথে বাজারে গরুর মাংস, দেশি মুরগি, ব্রয়লার, মাছ, লেবু, শসা ও গাজরের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা ও সোনালী মুরগি ৩০০ টাকা থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া দেশি মাঝারি সাইজের মুরগী প্রতি জোড়া ৯শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা এবং দেশি হাঁস ১২শ থেকে ১৪শ টাকা জোড়া বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হাঁসের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায় ও লাল ডিম ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে লেবু, শসা ও খিরার। লেবু প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। শসা ও খিরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ছোলা ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত মাসেও প্রতি কেজিপ্রতি ছোলা ছিল ১০০-১১০ টাকা। ছোলার পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে। মোটা মসুর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা দরে। মটর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে।
বোতলজাত ফ্রেশ সয়াবিন তেলের ডিলার শফিকুল ইসলাম জানান, চাহিদার তুলনায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না। টানা ৩ মাস ধরে এই সংকট চলছে, যে পরিমাণ তেল আসে তা সাথে সাথেই বিক্রি হয়ে যায়। রমজানে তেলের আরও চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সরবরাহ তেমন একটা নেই। পর্যাপ্ত যোগান থাকলে এই সংকট থাকবে না বলে দাবি তাঁর।
মেসার্স বণিক ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী বলরাম বণিক বলেন,সংকট তো থাকবেই তেল দরকার ১০ কার্টন, ডিলারে দেয় ৪-৫ কার্টন। এখন ৫০০ মিলি তেলের বোতল ছাড়া কোনো বোতল পাওয়া যায় না। অর্ডার দিয়াও মাল পাই না।বর্তমানে প্যাকেটের তেল বিক্রি করতেছি। তাও যেগুলো আসে সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়।
জসিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা জানান, রমজানের অজুহাত দেখিয়ে দোকানিরা দাম বাড়িয়েছে,এক সপ্তাহের মধ্যে এতো পার্থক্য হবে কেন ? মাছ-মুরগি থেকে শুরু করে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। একটা লেবুর দাম ৮০ টাকা বেশি দাম দিয়াই কিনতে হচ্ছে জিনিসপত্র।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন,রমজান মাসকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে বাজার যেন অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য আমরা বাজার মনিটরিং করার পাশাপাশি দোকানিদেরকে জরিমানাও করছি। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর