
দীর্ঘদিন ধরে চলা ভোজ্যতেলের সংকট এখনো কাটেনি। প্রথম রোজার দিনেও পণ্যটি নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে।
রাজধানীর পাইকারির সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজারেও চাহিদার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। খুচরা ও পাইকারি বাজারগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য হাহাকার চলছে।
তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কেটে যাবে বলে তেল আমদানিকারকরা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এবার ভোজ্যতেলের কাঁচামাল আসতে দেরি হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল রবিবার (২ মার্চ) প্রথম রোজা উপলক্ষে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট পরিদর্শন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে (রবিবার) কারওয়ান বাজারে খুচরা এবং পাইকারি দোকানগুলো পরিদর্শন করলাম।
দোকানদারদের সঙ্গে আলাপ করে প্রত্যক্ষভাবে জানতে পারলাম, ভোজ্যতেল সয়াবিন ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের সংকট নেই। গত বছরের তুলনায় এ বছর সয়াবিন কিছুটা কমতির দিকে। তাই দোকানদাররা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেল পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ স্বস্তিতে থাকবে। আমরা মানুষকে স্বস্তিতে রাখার চেষ্টা করছি।’
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানে লেবুর বাড়তি চাহিদার সুযোগে ইচ্ছামতো পণ্যটির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। গত দুই সপ্তাহ আগেও লেবুর হালি ছিল মানভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেড়ে এখন লেবুর সাইজ ও মানভেদে প্রতি হালি ৬০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। লেবুর মতো দাম বেড়েছে শসা, লম্বা বেগুন এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ফলের।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবারের মতো এবারও ইফতারসামগ্রীর দাম চড়া, যা সাধারণ মানুষের খরচ বাড়িয়েছে। তবে বাড়তি চাহিদা তৈরি হলেও এবার বাজারে অনেকটাই স্থিতিশীল ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ও চিনি। বরং ছোলা, খেজুর ও চিনির দাম কিছুটা কমেছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটে খোলা তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজি স্টোরের ব্যবসায়ী মো. কামাল গাজী বলেন, ‘কম্পানিগুলো এখনো তেল দিচ্ছে না। আমরা আশা করেছিলাম প্রথম রমজানের মধ্যেই পর্যাপ্ত তেলের সরবরাহ পাব।
কিন্তু এখনো ডিলাররা কোনো অর্ডার নিচ্ছেন না। দোকানে তেল না থাকায় ক্রেতারা ঘুরে যাচ্ছে।’ দ্রুত বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এবার রোজায় তেল ছাড়া অন্যকোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। পাইকারি ও খুচরা সব পর্যায়েই পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। দামও গতবারের তুলনায় কম।’
বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহের বিষয়ে বসুন্ধরা ফুডের বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিতরণ) মো. রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘আজকে (রবিবার) চট্টগ্রাম বন্দরে তেল নিয়ে জাহাজ ঢুকেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই এসব তেল বাজারে চলে আসবে।
এতে বাজারে তেলের সংকটও কেটে যাবে। আমাদের সঙ্গে আরো বেশ কয়েকটি কম্পানির তেলও বন্দরে ঢুকেছে। মূলত কাঁচামাল আসতে দেরি হওয়ার কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে এবার ব্যাপক তেল আমদানি হয়েছে। আগামী ৭ মার্চের মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন তেল খালাস হবে। ধাপে ধাপে আমদানি করা আরো তেল খালাস হবে।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট সাইজের লেবু ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালি, মাঝারি সাইজের লেবু ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং বড় সাইজের লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে উন্নতজাতের লেবু আরো কিছুটা বেশি দামেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাইব্রিড শসা কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি শসা কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং খিরার কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন কেজি মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার কাঁচামরিচের দাম তুলনামূলক কম। কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ কেজি ৪৫ টাকা, ছোলা কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা, বেসন কেজি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি কেজি ১২০ টাকা, আলুর কেজি ২০ টাকা, দেশি আদা কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুন কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে গত শনিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামের একটি তুলনামূলক মূল্যতালিকা দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, গত বছরের রমজানের সময়ের তুলনায় এবার আটা, ময়দা, চিনি, আলু, টমেটো, আদা ও পেঁয়াজের দাম কমেছে।
সরকার এবার ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দেয়। এর সুফল পাওয়া যায় চিনি ও খেজুরের বাজারে। তবে সয়াবিন তেলে সুফল পাওয়া যায়নি। গত রমজানের তুলনায় এবার ভোজ্যতেলের দাম ১১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘গত রমজানের চেয়ে এবার বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে, কমেছে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পুরো রমজানে অন্তর্বর্তী সরকারের নজর থাকবে।’
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর