
২০০৬ সালে বগুড়ার গাবতলীতে কাগইল ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর হলেও কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি আজও। দেড়যুগ ধরে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন প্রত্যন্ত জনপদের মানুষ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম সম্বলিত ভিত্তিপ্রস্তর। সেখানে নির্মাণ হয়নি কোনো অবকাঠামো বা স্থাপনা। বছরের পর বছর হাসপাতালটি আলোচনায় এলেও নানা অজুহাতে দায়সারা ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাবতলী উপজেলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ২০ শয্যা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গাবতলী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের জনপদ কাগইল এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণে জমি দান করার উদ্যোগ নেওয়াসহ সহযোগী ভূমিকা রাখেন সামর্থ্যবানরা। ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে কাগইল হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান এবং তৎকালীন সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু। ভূমি অধিগ্রহণ উদ্যোগের আগেই সরকার পরিবর্তনে থমকে যায় কার্যক্রম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ১৯ বছরেও নির্মাণ হয়নি হাসপাতাল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে চরমভাবে বঞ্চনার শিকার হয় বগুড়া। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বগুড়া বৈষম্যের লাল ফাইলে বন্দি ছিল। বিশেষ করে জিয়া বাড়ি ঘিরে গাবতলী উপজেলাকে প্রতিহিংসার নজরে দেখতেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা।
কাগইল এলাকার বাসিন্দারা বলেন, দেশের সব অঞ্চলের মানুষ গাবতলী উপজেলার কথা শুনলেই শহিদ জিয়াউর রহমানের নামটিই প্রথমে মুখে আনেন। আওয়ামী লীগের আমলে সরকারি বেসরকারি দপ্তরে চাকরি প্রত্যাশীরা গাবতলীর কথা উচ্চারণ করলেই তাদেরকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হতো। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলেন, কাগইল ২০ শয্যা হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তরে তারেক রহমানের নাম থাকায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার স্বাস্থ্য বিভাগ।
গ্রামের অসচ্ছল চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষগুলো প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেন কাগইলে একটি হাসপাতাল হবে। কাগইলসহ আশপাশের বেশকয়েকটি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার জনগণের হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কাগইল গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন (স্থানীয় ভাষায়), “হামাকেরে এটি হাসপাতাল না থাকার জন্যে অনেক সিরিয়াস রোগী বগুড়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় মরে গেছে। হামরা সরকারি ওষুধ পাইনে, ওষুধ আনতে গেলে উপজেলা হাসপাতাল যেতে লাগে। হামাকেরে গরীব মানুষের জন্যে তারেক রহমান সোল-ডা হাসপাতাল করবের চাচ্ছিলো। এই হাসপাতাল হলে হামরা হাতের কাছেই চিকিৎসা লাভ করব।”
বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আলহাজ্ব মোশারফ হোসেন বলেন, “শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ায় বিএনপির ভিত্তি ভাঙতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছিল স্বৈরাচারের দল আওয়ামী লীগ। এই এলাকা উন্নয়ন বঞ্চনার শিকার হয়েছে। হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করব। জনগণ চাইলে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসবে। অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ বিএনপির হাত ধরেই সমাপ্ত হবে বলে বিশ্বাস করি।”
এ ব্যাপারে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফারজানুল ইসলাম বলেন, “গাবতলীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের চিকিৎসাসেবা বিষয়ে হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তরের বিষয়টি জানা ছিল না। আমাদের ক্ষমতাও অনেকটা সীমিত। তবুও আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে কাগইল হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাবো।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর