
পাইকগাছায় ভরা মৌসুমে ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন ভাটা মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। হঠাৎ ভাটা বন্ধের খবর শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকরা। মৌসুমের মাঝপথে হঠাৎ ভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে সব ভাটা মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন তারা। মালিক, নারী-পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারীদের আশঙ্কা, হঠাৎ ইটভাটা বন্ধ হলে এর প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই পড়বে। উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। কোটি-কোটি টাকার বিনিয়োগ জলে যাবে এবং মৃত্যু ছাড়া কোন পথ থাকবে না ভাটা মালিকদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন নম্বর-১৩৭০৫/২০২২ এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনা মতে চলতি ৭ মার্চের মধ্যে উপজেলার সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ও ভাটায় কাঠের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল স্বাক্ষরিত পরিপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, যে সকল ইটভাটার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, সেগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে জরুরি ভিত্তিতে খুলনা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার সকালে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন উপজেলার ১৩ ইটভাটা মালিকদের নিয়ে বৈঠকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেন।
এদিকে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে সোমবার দুপুরে ইটভাটা মালিকরা করণীয় বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
আল্লারদান (এডিবি) ব্রিকস এর মালিক মো. আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন এসএকে (মা) ব্রিকস এর মালিক রুহুল আমিন খান, ত্রি-স্টার ব্রিকস এর মালিক আশরাফুল আলম, মেসার্স এএসএম ব্রিকস এর মালিক জি.এম অহেদুজ্জামান, সরদার (এমএসবি) ব্রিকস এর মালিক কামাল সরদার, ফাইভস্টার ব্রিকস এর মালিক আলহাজ্ব মিরাজুল ইসলাম, বিএকে ব্রিকস এর মালিক এম মহিউদ্দিন খান, সরদার মা ব্রিকস (এসএম) এর মালিক নাজমুল হুদা মিথুন, এবং বিসমিল্লাহ (বিবিএম) ব্রিকস এর মালিক খলিলুর রহমান।
সভায় ভাটা মালিকরা মানবিক আবেদন জানিয়ে বলেন, বিগত ২০-১২-২০১৩ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে ও ডিসি'র অনুমতি ও লাইসেন্স, প্রতিবছর সরকারি রাজস্ব, ভ্যাট, আয়কর, ভোক্তা অধিকার, ফায়ার সার্ভিস, শ্রম অধিকার সনদ নিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। ভাটার শুরুতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নানা ঝুঁকি নিয়ে এই ব্যবসা করতে হচ্ছে। প্রত্যেক ইটভাটায় শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে। কিন্তু মৌসুমের মাঝপথে হঠাৎ ইটভাটা বন্ধ করা হলে ভাটা মালিকরা পড়বেন চরম বিপদে। এর সাথে শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে যাবেন এবং সমাজে অপরাধের প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। সব মিলিয়ে উন্নয়ন ব্যাহত হবে।
এ বিষয়ে এডিবি ব্রিকসের মালিক মো. আব্দুল জলিল জানান, অনেক ইটভাটার গত ২২ বা ২৩ সাল পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র আছে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র না দিলে আমরা মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন করে সরকারি নিয়মনীতি মেনে ভাটা পরিচালনা করছি।
ত্রি-স্টার ব্রিকসের মালিক আশরাফুল আলম বলেন, এখন ভাটা মালিকরা বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তিতে কয়লা চালিত জিগজাগ ভাটা তৈরি করে ইট উৎপাদন করছে, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। ভাটা মালিক আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, উপজেলায় বেশিরভাগ ইটভাটা চাঁদখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। এ ইউনিয়নের সবগুলো ভাটা জিগজাগ। আবার বেশিরভাগ ভাটা মামলা পরিচালনা করছে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের মানবিক আবেদন, আধুনিক প্রযুক্তির জিগজাগ ভাটার কার্যক্রম চালু রাখা হোক, এতে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক থাকবে। পাশাপাশি যেসব ভাটা ড্রাম চিমনি ও লাকড়ি ব্যবহার করছে সেগুলো বন্ধ করা হোক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না।
এদিকে, কয়েকদিন আগে ঢাকাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ হায়দার বলেছেন, ইটভাটা মালিকদের হয়রানি করা হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে ভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি, সব অবকাঠামো নির্মাণে ইটের ব্যবহার হচ্ছে। এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর