
কুমিল্লার বুড়িচং অংশে গোমতী নদীর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একাধিক সিন্ডিকেট। প্রতিদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চলে মাটি খেকোদের মাটি কাটা মহাউৎসব। কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় একদিকে যেমন সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব, অপরদিকে মাটি কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে গোমতী বাঁধ, নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষিজমি। গোমতীর বুকফাটা নিরব কান্না দেখছে না কেউ।
গোমতী নদীর চরের বর্তমান দৃশ্য দেখে দুঃখ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বললেন- ওরা আগে পুরো নদীটাই খেয়েছে। এরপরও ওদের পেট ভরেনি। এখন তাই গিলে খাচ্ছে গোমতীর চর। ওরা কৃষকদের জমির মাটিও ওরা খাবলে খাচ্ছে। ওরা এতোটাই ভয়ংকর যে তাদের নামও মুখে এনে প্রতিবাদ করা যায় না। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া, বালিখাড়া, শ্রীপুরসহ গোমতী নদীর চরের কয়েকটি পয়েন্ট এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গভীর রাত থেকে শুরু হয় চরের মাটি কাটা। থামে ভোর রাতে।
শতাধিক ট্রাক্টরে করে গোমতীর চরের বেশির ভাগ মাটি যায় বিভিন্ন ইটভাটায়। ট্রাক্টরের চাকায় নদী পাড়ের পাকা সড়কগুলো এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অতীতের তুলনায় এ বছর বেড়েছে মাটিকাটা। ক্ষতবিক্ষত গোমতী নদীর চরজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। তবে এই হাহাকার শুনে যারা পদক্ষেপ নেবেন, তাদের দেখা যায় না নদী পাড়ে। চর থেকে মাটি লুটের মহোৎসব চলছে। সেই সাথে ধুলোবালুতে গোমতী পাড়ের বাসিন্দাদের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শিশুদের রোগবালাই বেড়ে চলেছে। লাগামহীন লোপাট হচ্ছে গোমতী নদীর চরের কৃষিজমির মাটি। পুরো এলাকাটি দেখলে মনে হয়- যেন মাটি কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর থেকেই প্রতিটি এলাকাতেই প্রভাবশালীরা নদীর বালু আর চরের মাটি গিলে খাচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বেশিরভাগ স্থানে ভেকু ও কোদাল দিয়ে লোপাট হচ্ছে চরের কৃষিজমির উর্বর মাটি। এতে গোমতী নদীর চর এলাকায় প্রতিদিনই কমছে কৃষিজমির পরিমাণ। আর গোমতী নদীর দুই পাশের প্রতিরক্ষা বাঁধও দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্ষার সময় নদীতে জোয়ার আসলেই বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও গত বছরে বুড়িচং অংশ দিয়েই গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি ছিল এবং ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে যায়।
জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর উদয়পুরে। গোমতী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার এলাকা দিয়ে। পরে জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। বাংলাদেশ অংশে এ নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, যেসব অভিযান হচ্ছে- তার প্রায় সবই লোক দেখানো। কারণ মূলহোতারা তো ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। যারা ধরা পড়ছেন, তারা তো সামান্য শ্রমিক মাত্র। গোমতীর বালু আর মাটি নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। প্রশাসনও জানে, কারা এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন মূলহোতাদের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত গোমতীর অস্তিত্ব রক্ষা হবে না। পুরো গোমতীর চর এখন মাটি খেকোদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, যেভাবে গোমতী চরের কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে, তা বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। কুমিল্লার শাক-সবজি উৎপাদনের অন্যতম উৎস গোমতীর চর। এ বছর যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে করে চর থেকে অন্তত ৭০০ একর ফসলি জমি হারাবে।
এসব প্রসঙ্গে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ূয়া জানান, গোমতী নদী চরের মাটিকাটা বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট এ নিয়ে কাজ করছেন। এসব বালু আর মাটিদস্যুরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আমরা তাদের ছাড় দেব না। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘যেসব অভিযান হচ্ছে তার প্রায় সবই লোক দেখানো। কারণ মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। যারা ধরা পড়ছেন তারা সামান্য শ্রমিক। গোমতীর বালু আর মাটি নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। প্রশাসনও জানে কারা এগুলোর নিয়ন্ত্রণ করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন মূলহোতাদের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত গোমতীর অস্তিত্ব রক্ষা হবে না। পুরো গোমতীর চর এখন মাটি খেকোদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেভাবে গোমতী চরের কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে, তা বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। কুমিল্লার শাক-সবজি উৎপাদনের অন্যতম উৎস গোমতীর চর। এ বছর যেভাবে মাটিকাটা হচ্ছে তাতে করে চর থেকে অন্তত ৭০০ একর ফসলি জমি হারাবে।’
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ূয়া বলেন, ‘গোমতী নদী চরের মাটিকাটা বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট এ নিয়ে কাজ করছেন। এসব বালু আর মাটিদস্যুরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আমরা তাদের ছাড় দেব না। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গোমতির চরে কিছু লোক চুরি করে মাটি কেটে নিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধা দিলেও মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা চাই গোমতি চরের স্থানীয়রা গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলুক। আমরা ইতিমধ্যে কিছু লোকের নাম সংগ্রহ করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং সরকারিভাবে মামলা হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর