
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, খাবারের মান বৃদ্ধি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে ১৩টি দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
স্মারকলিপিতে সাদা দল জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার বাতিঘর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে। উচ্চশিক্ষা যুগে যুগে নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করে জাতিকে। যে কোনো সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক উচ্চশিক্ষা একটি দেশকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য মানসম্মত উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত অপরিহার্য।
তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, উচ্চশিক্ষার প্রসার, গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং সর্বোপরি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিস্তারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিসীম। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং ২৪-এর কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা বিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। যুগে যুগে বাংলাদেশের শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠায়, গবেষণা ও উদ্ভাবনের প্রসার, সঠিক নেতৃত্বের বিকাশ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হল, দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির সাথে তুলনামূলকভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের পাঠ-পঠন আধুনিক হয়নি এবং এর অবকাঠামোরও সময়োপযোগী উন্নয়ন সাধিত হয়নি।
এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য সাদা দলের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়েছে:
১. প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য স্বতন্ত্র বেড নিশ্চিতকরণ (One Student-One Bed): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪টি এবং ছাত্রীরা জন্য ৫টি আবাসিক হল এবং ৪টি হোস্টেল রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর চাহিদার তুলনায় হলগুলোতে আবাসন সুবিধা অপ্রতুল। এর ফলে শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হল নির্মাণ এবং পুরনো হলগুলোর সংস্কারের মাধ্যমে 'একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্বতন্ত্র বেড' নিশ্চিত করতে হবে।
২. হলগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা: হলগুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধি এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. শ্রেণি কক্ষের মানোন্নয়ন ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: শ্রেণিকক্ষগুলোর অবকাঠামো সংস্কার ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের উন্নয়ন: কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ অন্যান্য গ্রন্থাগারের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক বই ও জার্নালের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সৃষ্টি: অর্থনৈতিক দিক থেকে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৬. প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা: প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য Need-based বৃত্তির ব্যবস্থা করা।
৭. ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ করে বাস সার্ভিসের সময়সূচি বাড়াতে হবে।
৯. স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং ও মেন্টরশীপ কর্মসূচি উন্নয়ন: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং সেন্টারের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
১০. প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন: রেজিস্ট্রার অফিসসহ সকল দপ্তরের কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করতে হবে।
১১. শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ: ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
১২. ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তার সংস্কার: ক্যাম্পাসের বেহাল রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে।
১৩. জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও স্যার পি. জে. হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এম এ কাউসার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর