
রাজধানী দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সময় ভূমিকম্পে কাঁপল সিলেট। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
রুবায়েত কবীর বলেন, আজ বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত বলে জানান রুবায়েত কবীর।
ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চারবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হলো।
গত ৯০ দিনে বাংলাদেশের আশপাশে মৃদু ও তীব্র মাত্রার ৫৬ টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। ছোটো ছোটো ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি (জানুয়ারি) মাসের প্রথম সাত দিনে দুই বার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশ। গত ১৫ বছরে ১৫০টির বেশি ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে।
বিশ্বে ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের তালিকায় আছে ঢাকা। বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবুও কোনো সরকারই এ দুর্যোগে ক্ষতি কমাতে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।
ঢাকা শহর এমনিতেই খুব ঘনবসতি। ডোবানালা ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা হয়নি। ঢাকায় যদি ৭ রিখটার স্কেলের একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। তাহলে ঢাকা শহর পরিণত হবে হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সের মতো। দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষতাও আমরা অর্জন করতে পারিনি। বলা হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে প্রধান ৪টি ফল্ট রয়েছে, সেগুলোই মূলত ভূমিকম্পের মূল উৎস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃদু মাত্রার এসব ভূমিকম্প ইঙ্গিত দেয়, সামনে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের চেয়ে সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে গত ৭ জানুয়ারি রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে তিব্বতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এই ভূমিকম্পে তিব্বতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতও কেঁপে ওঠে। প্রধান ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনে অবস্থানের কারণে প্রায়ই এই অঞ্চল কম্পিত হচ্ছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভূকম্পনের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত। দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোটোখাটো কম্পন দেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা নির্দেশ করে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার টেকটোনিক প্লেট গেছে। গত শত শত বছর এসব প্লেটে বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ফলে এই প্লেটে সঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘদিনের শক্তি। হঠাৎই এটি ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এ মাত্রার ভূমিকম্প হলে লাখ লাখ প্রাণহানির সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে ঢাকা।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর