
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্ণব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার।
পরে তার মুক্তির দাবিতে রাত থেকে শাহবাগ থানা ঘেরাও করে রেখেছে “তৌহিদি জনতা” পরিচয় দেওয়া একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তারা শাহবাগ থানা এলাকায় অবস্থান করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাত ১টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা থানার সামনে জড়ো হন এবং আধা ঘণ্টা পর থানার ভেতরে ঢুকে পড়েন।
শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তার কক্ষের ভেতরে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, “তৌহিদি জনতা” পরিচয় দেওয়া একজন আটক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বিক্ষুব্ধ জনতা সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে। একপর্যায়ে দায়িত্বরত অফিসার এসআই একরামুল ইসলাম জনতাকে জানান, কাউকে আটক বা মুক্তির বিষয়ে তার কোনো আইনি ক্ষমতা নেই।
দায়িত্বরত কর্মকর্তা বারবার জনতাকে “মব” তৈরি না করার অনুরোধ জানান। এর জবাবে জনতা বলে, “আমরা কোনো মব তৈরি করিনি। আমাদের এক সহযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার প্রতি সংহতি জানাতেই আমরা এসেছি।”
শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রাত ২টা ১৫ মিনিটের পর জনতা থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেয়।
“তৌহিদি জনতা”রা জানান, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে না ছাড়া পর্যন্ত তারা এখানেই অবস্থান করবেন তারা।
তারা আরও জনান, জোর করে পুলিশ গ্রেপ্তার যুবক মোস্তফা আসিফ অর্ণবের জবানবন্দি নিয়েছে। তাকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা এখান থেকে যাবো না।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বলেছিলেন, “এই ছেলেটি এক ছাত্রীকে হেনস্তা করেছিল। পরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করে এবং থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করে। তারপর বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীটি তার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
প্রক্টর বলেন, “ওই ব্যক্তি শিক্ষার্থীকে হয়রানির বিষয়টি স্বীকার করেছে। এরপর তাকে শাহবাগ থানায় পাঠানো হয় এবং গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়।”
ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী-
হেনস্তার শিকার ওই ছাত্রীর ফেসবুক পোস্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। পোস্টের সঙ্গে হেনস্তাকারীর ছবিও জুড়ে দিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। তাতেই তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ফেসবুক পোস্টে ওই ছাত্রী লেখেন, “এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলছে আমার ড্রেস ঠিক নাই, আমি পর্দা করি নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। পরবর্তীতে তাকে আমি জিজ্ঞাসা করি আপনি কোন হলে থাকেন কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন। সে বলে সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি সালওয়ার কামিজ পরে ঠিকমতো ওড়না পরেছিলাম। সে আমাকে বলে আমার নাকি ওড়না সরে গেছে। পরে আমি তাকে বললাম এইটা তো আপনার দেখার বিষয় না, আর আপনার তাকানোও জাস্টিফাইড না। এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌঁড় দিয়ে চলে যায়।”
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর