
সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থে বনায়ন করার কথা থাকলেও গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিট এলাকায় ঘটেছে উলটো ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রাকৃতিক গজারি বন কেটে সেখানে নতুন চারা রোপণ করেছেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বনায়নের জন্য শুধুমাত্র পরিত্যক্ত বা উজাড় হওয়া জায়গায় গাছ লাগানো সম্ভব। কোনো অবস্থাতেই প্রাকৃতিক বন কেটে নতুন গাছ রোপণ করা আইনসম্মত নয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই হেক্টর জমিতে বনায়নের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনায়নের নামে প্রাকৃতিক গজারি বন কেটে ফেলেছেন এবং সেখানে আকাশমনি চারা লাগিয়েছেন। এটি বন সংরক্ষণ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
স্থানীয়রা জানান, আরপি গেটের পাশ থেকে শুরু করে শালবন গ্যারেজের পশ্চিমে এবং হালডোবা ইটের সলিং উত্তর দিকে—এই এলাকাগুলোতে শালবনের চারাসহ বিভিন্ন গাছ কেটে নতুন চারা রোপণ করা হয়েছে। অথচ এসব এলাকায় আগে থেকেই ঘন গজারি বন ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা জানান, সরকারি বা সংরক্ষিত বনভূমিতে নির্বিচারে গাছ কাটা গুরুতর অপরাধ। ১৯২৭ সালের বন আইন এবং ২০১৯ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারি অনুমোদন ছাড়া বনভূমি উজাড় করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
কবি লেখক পরিবেশবিদ, শাহান শাহাবুদ্দিন বলেন, যাদের দায়িত্ব বন সংরক্ষণ, তারাই যদি প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করেন, তাহলে এটি শুধু পরিবেশগত অপরাধ নয়, দুর্নীতিরও মধ্যেও পড়ে।
তিনি আরো বলেন, সামাজিক বনায়নের নামে কপিচ ব্যবস্থাপনা তথা আদি বৃক্ষকে হত্যা করে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করে তা বিনষ্ট করা হচ্ছে। এটি বন বিভাগের নৈতিক অবস্থানের পরিপন্থি বলে মনে করি। এছাড়াও সামাজিক মনোকালচার পদ্ধতি আদৌ পরিবেশসম্মত নয় এবং বনের সংজ্ঞায়ও পড়ে না। ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি জাতের গাছগুলো মাটি থেকে অস্বাভাবিক মাত্রায় রস টেনে বেড়ে ওঠে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এসব গাছে তেমন পোকামাকড় হয় না। পাখিও বসে না। সঙ্গতকারণে কপিচ ব্যবস্থাপনা বিনষ্ট করা মানে হচ্ছে ইকোসিস্টেম ধ্বংসের বিশেষ ধাপ অতিক্রম করা।
এ বিষয়ে রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত বিট কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, "যে-সব এলাকায় শাল বা গজারি বনের গাছ আছে, সেখানে গাছ কেটে নতুন বাগান করার কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র উদ্ধার হওয়া জমি বা খালি জায়গায় বনায়ন করা যায়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সেভাবেই কাজ করছি। তবে আমার আগের সময়ে যা ঘটেছে, তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা নেই। তবে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।"
এ বিষয়ে ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, "প্রাকৃতিক বন কেটে নতুন করে বনায়নের কোন সুযোগ নেই, তবে উদ্ধার হওয়া জমি বা খালি জায়গাতে বনায়ন করা যায়, আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয় টা জানলাম,বিষয়টা আমি দেখছি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর