
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে দুর্বার নেটওয়ার্কের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার বরগুনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা দুর্বার নেটওয়ার্কের সভাপতি কাজল রানী দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, দুর্বার নেটওয়ার্কের সদস্য ও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার চন্দ্রিমা দেয়া।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ, সাবেক সভাপতি চিত্তরঞ্জন শীল, মনির হোসেন কামাল, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার, বিশিষ্ট সমাজসেবক সুখরঞ্জন শীল, নারী নেত্রী নাজমা বেগম প্রমুখ।
"আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়"প্রতিপাদ্যকে সামনে ঘোষণাপত্রে বলা হয়- বিশ্ব জুড়ে নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার দিন ৮ মার্চ, 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস'। দিবসটি অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের সেলাই কারখানার নারীশ্রমিকরা বিপজ্জনক ও অমানবিক কর্মপরিবেশ, স্বল্প মজুরি এবং দৈনিক ১২ ঘণ্টা শ্রমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদমিছিল বের করেন।
তাদের এই শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ, নিউ ইয়র্ক শহরের পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠনে সমর্থ হন।
১৯০৮ সালের ৮ মার্চ, আবারও নিউ ইয়র্ক শহরে একটি প্রতিবাদমিছিল বের হয়, যাতে পোশাকশিল্প কারখানার নারীশ্রমিকরা যোগ দেন। ৮ মার্চের এই ঘটনাধারার সম্মিলনের ফলে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন- এর প্রস্তাব অনুসারে ঐ দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' ঘোষণা করা হয়।
১৯৭৫ সালে দিবসটিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সারা বিশ্ব জুড়েই নারীর সম-অধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার জন্য দিবসটি পালিত হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন নারীর মুক্তি, ক্ষমতায়ন ও অধিকার কেবল কাগজে, শ্লোগানে বা বক্তৃতায় থাকলে হবে না, এর প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি গুরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি, বয়স নির্বিশেষে সকল নারীর জন্য।
নারীকে দিতে হবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের সম্মান ও মর্যাদা। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যানবাহনে, পথচলায়, উন্মুক্ত অনুষ্ঠানাদিতে নারীর সার্বিক সুরক্ষা দিতে হবে। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং নিজের ও সন্তানের অভিভাবকত্বে সমান অধিকার দিতে হবে। সর্বোপরি, নারীকে ছাড়া কোনোভাবেই নারীর বিষয়ে কোনোরকম সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, অর্থাৎ তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি পর্যায়ে তার সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন মতামত প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত প্রদান নিশ্চিত করতে দুর্বার নেটওয়ার্কের দাবি:
নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও সহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে।
আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে কঠোর সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর