
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা এবং তাদের কার্যক্রম ঠেকাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ।
শুক্রবার (৭ মার্চ) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, যেই বাকস্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি, হাসিনাকে হটিয়েছি। সেই ৫ আগস্ট পরবর্তীতে যখন বাকস্বাধীনতা ফিরে এলো, আন্দোলন করার স্বাধীনতা ফিরে এলো, তখন সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে একটি উগ্রবাদী জঙ্গিবাদী। আমরা স্বৈরাচার হাসিনার বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, একইভাবে যারা হাসিনার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাদের পরিণতি হাসিনার মতোই হবে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা (হিজবুত তাহরীর) তিন থেকে চারদিন আগে ঘোষণা দিয়ে পোস্টার লিফলেট দিয়ে সারাদেশ ছেয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আমাদের প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করেছিল? আমাদের দেশে কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠী যখন আস্ফালন দেখাতে চায়, তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সুযোগ করে দেয়। আমরা প্রশ্ন রেখে যেতে চাই, আজকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কী?
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন, আজকে জুম্মার নামাজের পরে বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের মিছিল বের হয়েছে। এই মিছিলের প্রচার-প্রচারণা বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই চলছিল। ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে ও মেট্টোরেলের প্রত্যেকটি পিলারে এই সমাবেশের জন্য পোস্টার সাটানো হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রচার-প্রচারণা চললেও গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষিদ্ধ সংগঠনটির ব্যাপারে কোনো কঠোর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আজকে সেই পুলিশকে দেখেছি, যারা জুলাই-আগস্ট মাসে আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। সেই পুলিশকে নির্বিকার হাঁটতে দেখেছি পল্টন ও বায়তুল মোকাররমে। পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালাতে পারে, কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনটির প্রতি কেন নীরব ভূমিকা পালন করে সেটি বাংলাদেশের মানুষের ভাবার সময় এসেছে। শুধু আজ নয়, বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। হিজবুত তাহরীর সাথে বাংলাদেশের মুসলমান ও আলেম সমাজের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করতে চায় এবং দেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে চায়।
এসময় ‘উগ্রবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘সন্ত্রাসবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘উগ্রবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে ঢাবি মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম ও মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিল
এদিকে হিজবুত তাহরীরের প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। ঢাবির মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এসময় তারা ‘আমার মাটি, আমার মা’, ‘জঙ্গিবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘একটা জঙ্গি ধর, ধইরা ধইরা জবাব কর’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে দুপুরে জুম্মার নামাজ শেষে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কয়েক হাজার সমর্থক দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ শুরু করলে। পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর