
কয়লা চুল্লির ধোঁয়ায় খুলনার পাইকগাছার চাদঁখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে চুল্লি ভাঙচুর করাকালে চুল্লি মালিকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে নিজেরাই ভেঙ্গে নিবেন শর্তে ১ মাসের সময় চেয়ে নেয়। এর মধ্যে ২ বছর চলে গেলেও এক মাস আর ফিরে আসেনি। রশিকজনেরা বলছেন, আর কত বছর হলে একমাস হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের চাঁদখালী বাজারে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে প্রায় দু-কিলোমিটার পর্যন্ত শতাধিক অবৈধ কাঠের চুল্লি গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশই সরকারী সম্পত্তির উপর। কোনোটিরই নেই পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র ও লাইসেন্স। সুন্দরবনের চুরাই কাঠ পুড়িয়ে তৈরী করা হয় কয়লা। চুক্তিতে সুন্দরবনে কাঠুরি পাঠিয়ে কাঠ কেটে ট্রলার যোগে পৌঁছানো হয় এলাকায়। কাঁচা এই কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা সরবরাহ করা হয়।
কাঠ পুড়ানোর সময় ধোঁয়ার কুন্ডলিতে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে ওঠে। যেমন বিশ্রী গন্ধ তেমনি পাইকগাছা ও কয়রা প্রধান সড়কের চাঁদখালীর এই দু -কিলোমিটার এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। জনসাধারণের চলাচল দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। একারণে এলাকার লোকেরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে জটিল রোগে। প্রশাসন চুল্লি অপসারণে খুব একটা আন্তরিক না থাকায় এলাকাবাসী এবিষয়ে কোথাও অভিযোগ করতে আগ্রহী হয়না। স্থানীয়রা বলেন, অভিযোগ করলে কেউ আসলে তারা অজ্ঞাত কারণে চুপ হয়ে যায়। গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা চুলি উচ্ছেদে অভিযানে ৫ টি চুল্লি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে।
এসময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু মোঃ ইলিয়াসের মাধ্যমে তারা এগুলো স্ব-উদ্যোগে এক মাসের মধ্যে ভেঙ্গে নিবেন বলে লিখিত প্রদান করেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে " প্রায় ২ বছর হয়ে গেলেও এখন একমাস হয়নি।" বরং ৬৯ টি চুল্লির জায়গায় সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১১ টি। এবিষয়ে তাদের গঠিত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, আমরা প্রশাসন, সাংবাদিক ও পুলিশকে প্রতি বছর টাকা দিয়ে ব্যবসা করছি। আপনাদের মোবাইল নম্বর দেন এক্ষুনি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। অহেতুক লিখে কি হবে। দেশের পট পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান বিদেশে পলাতক ও সাবেক থাকায় তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, একটি চুল্লিতে একবার ২'শ থেকে ৩'শ মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে একটি চুল্লিতে ৩ থেকে ৪ বার কয়লা তৈরী করা হয়। তাদের দেয়া হিসেব মতে প্রতি চুল্লিতে বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়। এতে যেম উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। তেমনি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বদর মসজিদের এক বৃদ্ধ মুসল্লী বলেন, তারা মসজিদে ঠিকমতো নামাজ আদায় করতে পারেন না ধোঁয়া ও গন্ধে। খুব মুসিবতে আছি বাবা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চেয়েছেন।এছাড়া এ বিষয়ে এলাকাবাসীকেও আরও সচেতন হতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর