
ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় পাঁচ দিনের ব্যবধানে একটি ইটভাটাসহ দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় জড়িতের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনায় এলাকায় বিরাজ করছে আতঙ্কের পরিবেশ। ধামরাই থানায় এসব ঘটনায় অন্তত দুটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযুক্তরা হলেন- গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন (৫৬), ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম (৩৫), সাংগঠনিক সম্পাদক মফিকুল ইসলামসহ (৫৫) তাদের আরও ২০-২৫ জন অনুসারী। তারা সবাই ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
তথ্য বলছে, গতকাল শনিবার রাতে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে অভিযুক্তরা জালসা এলাকার বিএমআর ব্রিকস নামে একটি ইটভাটায় হামলা করে। এর আগে, গত ৭ মার্চ জালসা এলাকায় ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাকে করে নেওয়ার সময় সৃষ্ট ধুলায় ভোগান্তির প্রতিবাদ করায় আব্দুল গফুর (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে মারধর করে অভিযুক্তরা।
এছাড়া গত ৫ মার্চ একই এলাকায় দাবি করা ৫ লাখ টাকা না পেয়ে আলী হোসেন (৩৭) নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীকে মারধর করেন একই অভিযুক্তরা। এরমধ্যে ইটভাটায় হামলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকে মারধরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
চাঁদা না পেয়ে ইটাভাটায় হামলার ঘটনায় ভাটার সহকারী পরিচালক ওবায়দুল্লাহর ধামরাই থানায় করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১০-১২ দিন আগে অভিযুক্তরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে হামলার হুমকিও দেয় তারা।
এরই জেরে গতকাল শনিবার (৮ মার্চ) রাত ৯টার দিকে অভিযুক্তরা ৩০-৪০ জনের বেশি লোকজন লাঠিসোঁটা, রড, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ ইটভাটায় এসে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না দেওয়ায় একপর্যায়ে ইটভাটার কর্মচারী হারুনকে (৪৫) মারধর করে তারা।
এছাড়া তাদের হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইটভাটার অফিসকক্ষ, দরজা, জানালা ও অফিসের স্টিলের ওয়ারড্রব ভেঙে ফেলে। ওয়ারড্রবে থাকা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিলে হত্যার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ, এ হামলায় নেতৃত্ব দেন গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মফিকুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম, ধামরাই উপজেলা তাতীদলের সভাপতি নজরুলসহ তাদের অনুসারীরা।
এদিকে ওই ঘটনায় ইটভাটা শ্রমিকদের বাধায় মাথায় আঘাত পান হামলায় অংশ নেওয়া মফিকুল ইসলাম ও আরিফ দেওয়ান। তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
এছাড়া চাঁদা না পেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে মারধরের ঘটনায় ভুক্তভোগীর করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গেল কয়েক বছর ধরে জালসা বউবাজার এলাকায় জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে আসছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্তরা গেল কিছু দিন ধরেই ভুক্তভোগীর কাছে চাঁদা দাবি করছিলেন, নাহয় দোকান বন্ধ করে তাকে এলাকা থেকে বের করার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরই জেরে গত ৫ মার্চ বিকেলের দিকে তারা ভুক্তভোগীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না দিতে চাওয়ায় তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে নিলাফুলা জখম করে অভিযুক্তরা।
এছাড়া তার কাছে থাকা ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তার কাছে মাসিক ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তারা তাকে ফেলে চলে যায়। অভিযোগ পত্রে উল্লেখিত এ হামলায় নেতৃত্ব দেন, মো. বাদল (৩০), মো. সেলিম রেজা (৩৫), মো. আবুল কাশেম ও মো. মফিকুল ইসলামসহ আরও ২-৩ জন।
অন্য দিকে গত ৭ মার্চ আব্দুল গফুর (৬৫) নামে এক বৃদ্ধকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী জানান, জালসা এলাকায় বিএনপি নেতা মো. আবুল কাশেম, মো. মফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়। সেই মাটি পরিবহনের ট্রাকের কারণে সৃষ্ট ধুলায় পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সম্প্রতি আব্দুল জলিল নামে স্থানীয় এক যুবদল নেতা ধুলা সৃষ্টি করা কয়েকটি ট্রাক চলাচল বন্ধ করেন।
খবর পেয়ে গত ৭ মার্চ রাতে কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে ২০-২৫ জন সেখানে এসে ট্রাক আটকানোর নির্দেশদাতা কে তা জিজ্ঞেস করেন। পার্শ্ববর্তী মুদি দোকানি আব্দুল গফুর সেখানে গিয়ে আব্দুল জলিলের নাম বলতেই আবুল কাশেম তাকে মারধর করেন। এ সময় মো. মফিকুল ইসলামসহ অন্যরা তাকে ঘিরে ধরেন। মারধরের পর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাননি এই বৃদ্ধ। তবে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
এসব বিষয়ে গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, আগের দুটি জানা নেই। গতকালেরটা শুনেছি। মূলত ইটভাটা মালিক আমাদের দুইবার বসার ডেট দিয়ে বসেনি, তিনিই সমস্যাটা বাধিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যারা চালাচ্ছে, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের। আর আমি ছিলাম না সেখানে। পার্টি দুইটা, তমিজ গ্রুপ, মুরাদ গ্রুপ। ঘটনা দুই গ্রুপই ঘটাচ্ছে, বেশিরভাগ করছে মুরাদ গ্রুপ। বিষয়টি নেতাদের কাছে গেছে, এখন বসা হবে।
এ বিষয়ে জানতে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিনকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল ধরেননি। পরবর্তীতে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ব্যস্ততার কথা জানান।
এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, আমি দুপুরের দিকে বিষয়টি জানতে পারি, তারা হাসপাতালে ভর্তি বলে শুনে গিয়ে দেখি তারা ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছে। যদি কেউ কোনো রকমের অপকর্মে লিপ্ত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির ঢাকা জেলার সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, বিষয়গুলো আমি জানি না। যদি কোনো অভিযোগ আসে, সেটি দেখব, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
ঢাকা জেলার সাভার সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অতি. এসপি) মো. শাহীনুর কবির বলেন, ৫ ও ৭ তারিখের বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাই নাই। ৮ তারিখের বিষয়ে বিএনপি দুই গ্রুপের ঘটনা। তবে কোনো অভিযোগ পাই নাই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর