
দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি মাঝরাতে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পর থেমে নেই বিক্ষোভ মিছিল ও বিচার দাবি।
শুধু ঢাবি না ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জ্বলছে সেই ক্রোধের আগুন। সকলের দাবি, ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
রোববার (৯ মার্চ) মধ্যরাতে ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হন রোকেয়া হলের সামনে। সেখানে দলে দলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হল থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। মুহুর্তেই উত্তাল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য। এসময় শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এভাবে রাত ২টার পরপরই একে একে রাজু ভাস্কর্য ছাড়তে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের উত্তপ্ত হতে শুরু করে ক্যাম্পাসগুলো। তাছাড়া, ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ আংশিক অথবা পূর্ণাঙ্গ ব্যাচ তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বাঁশের লাঠি হাতে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন ও শাহবাগ ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসেন। ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণের বিচার দাবি করেন তারা।
বেলা সোয়া ১২ টায় ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্লাটফর্ম থেকে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, নারীর ওপর নিপীড়ন গৃহ থেকে পাবলিক পরিসরে দেখতে পাই। এই নির্যাতনগুলো চলছে। সমাজ এই নির্যাতনকে স্বাভাবিকীকরণ করে। নির্যাতনের স্ট্রাকচার এমন হয়েছে যে, নির্যাতকরা জানে, তার কোনো শাস্তি হবে না। আর নারীকে দোষ দেবে, সে কেন পথে বেরিয়েছে।
এদিকে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বুয়েট একতাবদ্ধ উল্লেখ করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডসহ ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা। সকালে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান ও সন্তোষজনক নয়।
এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। বিক্ষোভ সমাবেশে ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত রাতেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এসময় এসময় তারা- ‘We want we want, Justice Justice’, ‘we want Justice, hang the rapist’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আছিয়া আছিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কী? খায় দায় ঘুমায় না কি?’- সহ নামা স্লোগান দিতে থাকেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর