
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ইজিবাইক চুরি করতে গিয়ে গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে রিফাত বিন সাজ্জাদ (২৩) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় তাকে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তার ফোন চেক করলে সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক অজ্ঞাত নারীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখে ঘাতক।
গত জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে রেললাইনে অজ্ঞাতনামা নারীর খণ্ড বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে সেই নারীর মৃত্যু ট্রেনে কাটা পড়ে হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও তদন্তে রিফাত বিন সাজ্জাদ সেই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে বলে বেরিয়ে এসেছে। সেইসাথে রিফাত আদালতে ধর্ষণের পর হত্যার কথা নিজেই স্বীকার করেন।
সোমবার (১০ মার্চ) পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং-এ এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি।
এর আগে, শনিবার (৯ মার্চ) ভোররাতে উপজেলার রাধানগর হাজী সাহার আলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মৃত ধজিব উদ্দীনের ছেলে তাহিরুল ইসলামের ইজিবাইক চুরি করে পালানোর সময় সে ধরা পড়ে। ঘাতক সাজ্জাদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকার আকতার হোসেনের ছেলে।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১৪ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার কিসমত স্টেশন সংলগ্ন রেললাইন থেকে অজ্ঞাত নারীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই দিনাজপুর রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়। তবে এত দিনেও ওই নারীর পরিচয় এবং হত্যা রহস্য কোনোটাই উদ্ঘাটন না হলেও সাজ্জাদকে ধরার পর বেরিয়ে এসেছে হত্যারহস্য। সে তার অপরাধ স্বীকার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক সাজ্জাদ পুলিশকে জানিয়েছে, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী একটি ট্রেনে অজ্ঞাত ওই নারীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে তাকে প্রলোভনে ফেলে আটোয়ারী উপজেলার কিসমত রেল স্টেশনে দুইজনে নেমে পড়েন। এরপর রেলগেটের পশ্চিম পার্শ্বে শাপলা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দরজাবিহীন একটি কক্ষে ও পরবর্তীতে কিসমত রেলগেটের উত্তরপূর্ব দিকে জনৈক হবিবর রহমানের চাটাই বেড়ার টিনের ঘরের পিছনের উত্তরে জনৈক আলমের সুপারি বাগানের মধ্যে নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণ শেষে ইট দ্বারা মাথায় আঘাত করে হত্যা করে সে। পরবর্তীতে ছুরি দ্বারা শরীর বীভৎস ভাবে ক্ষত-বিক্ষত করে রুহিয়া-কিসমত সেকশন রেললাইনের উপর ফেলে রাখে। আর এই হত্যাকাণ্ডের কিছু ছবি নিজের ফোনে ধারণ করে রাখে সে। তবে ওই প্রকৃত পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ১৪ জানুয়ারি রেললাইনে নারীর খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধারের পর ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লী এলাকার একটি পরিবার মরদেহটি তাদের নিখোঁজ স্বজনের দাবি করে সেসময় দাফন সম্পন্ন করে। তবে ঘাতকের ফোনের ছবি অনুযায়ী এটি ওই পরিবারের স্বজন নয়। ভিকটিমের পরিচয় শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, ঘাতক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আটোয়ারী থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং অপরটি চুরির মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা দুটি তদন্ত করছে পুলিশ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর