
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পবিত্র মাহে রমজান মাস উপলক্ষ্যে ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া নামের এক গারো আদিবাসী নারী গরীব, অসচ্ছল ও অসহায় রোজাদারদের জন্য তার দোকানের নিত্যপণ্য বিক্রিতে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছেন। রোজার দিনে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে জিনিসপত্রের দাম যখন বাড়িয়ে দেয়। ঠিক এমন সময়ে গারো আদিবাসী নারী উদ্যোক্তার তার দোকানের পণ্যের দাম কমে বিক্রি করছেন। নিভৃত পল্লিতে প্রথম রোজা থেকেই এই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার এই ব্যতিক্রমী মানব কল্যাণমূলক কাজে সন্তুষ্ট হয়েছেন ক্রেতা সাধারণ ও এলাকাবাসী।
উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের কয়ড়া আন্ধারুপাড়া গ্রামের নাকুগাঁও-নালিতাবাড়ী মহাসড়কের পাশে “মিষ্টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর” নামে তার ওই দোকানটি অবস্থিত। এ সম্পর্কে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলের ওয়ালে লিখেন, “সবাই যখন দাম বাড়ায়, আমি তখন কমিয়ে দিলাম”। তার লিখা এই পোস্টটি ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া পায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দর চকচকে, মনোরম, পরিচ্ছন্ন ও গোছানো পরিবেশে বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো দোকানটি। তারই সামনে বড় বড় অক্ষরে ব্যানারে লিখা “মিষ্টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর”। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে এখানে লাভ ছাড়া ক্রয়মূল্যের চেয়েও কম দামে দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। দরিদ্র অসচ্ছল পরিবারের কথা বিবেচনা করে এই বিশেষ উদ্যোগটি নিয়েছেন তিনি। দোকানের ভেতরে দ্রব্য মূল্যের তালিকা টানিয়ে রাখা হয়েছে। সেই তালিকা দেখে ক্রেতারা জিনিস কিনতে পারছেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও রমজান মাস উপলক্ষ্যে মুসলমানদের জন্য গ্রহণ করেছেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তার দোকানে চাল, ডাল, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা ও খেজুর থেকে শুরু করে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মূল্য ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
বছর ঘুরে রোজার মাস আসলে দেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। যা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খুবই কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায়। অথচ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। ব্যাবসায়ীদেরকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এই সুবিধা পাচ্ছেন মুসলিম সম্প্রদায়সহ সকল ধর্মের মানুষ।
ওই দোকানে জিনিস ক্রয় করতে আসা হাতেম আলী (২২) বলেন, আদিবাসী কেয়া নকরেকের এই মহতি উদ্যোগটি অসাধারণ ভালো লেগেছে। যেখানে আমরা মুসলমান ব্যবসায়ীরা করিনি। সেটি কেয়া আপা অন্য ধর্মের মানুষ হয়েও এই মানবিক কাজটা করেছেন।
ক্রেতা নুরভক্ত (৪০) বলেন, আমরা গরীব মানুষ অন্যের কাজ করে সংসার চালাই। রোজার মাস উপলক্ষ্যে এই দোকান থেকে কম টাকায় জিনিসপত্র কিনতে পারছি। বাজারের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমরা খুব খুশি।
অপর ক্রেতা জামেলা বেগম (৩৫) বলেন, “আমগোর লাইজ্ঞা এইডা খুব ভালা হইচে। বাজারে জিনিসের দাম বেশি নেয়। এন্তে কিনলে আমরা অনেক কম দাম পাই।”
ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়েও কেনো তিনি এমন উদ্যোগ নিলেন এমন প্রশ্নে ক্লোডিয়া নকরেক কেয়া বলেন, জিনিসপত্রের কম মূল্য পেয়ে রোজার মাসে আমাদের গরীব, অসচ্ছল ও খেটে খাওয়া মানুষেরা যেন রোজা রাখতে পারে একটু উপকৃত হয় সেজন্য মানবিক দিক বিবেচনায় আমি এই উদ্যোগটি নিয়েছি। আমি আমার দোকানে বর্তমান বাজারের খুচরা মূল্যের চেয়ে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা কমে জিনিস বিক্রি করছি। মানুষ প্রথমে এটি বিশ্বাস করেনি। কিন্তু এখন জিনিসপত্র ক্রয় করতে উৎসাহিত হচ্ছন। আমি নিজেও একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার মতো মানব সেবায় রোজার মাসে সকল ব্যবসায়ীর এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। পুরো রমজান মাস জুড়ে এই কার্যক্রম চালু রাখবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর